নারাজষণ হাক্জোপাধায় অআনংপুর্শ॥ ওলকাশনা ৩৩৯ কক্েজ কো কল্সিকাভা-০ এন কাম্পকি 2 বিজ ক্ষ দাড্ন ৩৬০ কলেজ ৫ । কাত কা তা-স৯ এখন ঞকাশ্প বদ্ধ ১৩০৬৬ সচখপত্র গান শোনাবার নমল্্ণ একাট মনোরম দবস বম্ধুকে না নাখলে মাৎসন্যন্যায় অভ্যর্থনা একাঁট মোটর যাল্লা একাঁট করুন ফটোশ্রাঁফ ত'পনের চোর চচ্ভী ৯১০১ ২০১ ৪৩ ডে এ ৬০১ ৮৩ ৩১ তপনকে সিগারেট খেতে শিখিয়ে নিজেই হাত কামড়াচ্ছি। গোড়াতে ভেবেছিলুম-_-সব ভদ্র সম্তানই যেমন ভেবে থাকে --তপন একবার সিগারেট ধরুক, তারপর ওকে আমিই চেপে ধরব। কিন্তু এমনিতে যত দিল-দরিয়াই হোক, সিগারেট কিনতে বললেই ওর জবাব £ দূ্দ,র, পয়স! দিয়ে ধোয়া কিনে খাব ? তার মানে আমি যে সিগারেট কিনছি তাতে পয়সা খরচ হচ্ছে না। অন্তত ওর যে হচ্ছে না_-তাতে আর সন্দেহ কী ! সঙ্গে যখন থাকে, তখন আমি একটা প্যাকেট কিনলে তার সাতটাই ও উড়িয়ে দেবে। শেষে বিরক্ত হয়ে বলেছিলুম, ভাই তপন, ডাক্তারের বলেছেন সিগারেট খাওয়া খুব খারাপ । ওতে ক্যানসার হয়। -_তুমি যে খাচ্ছ বড়ো! ? আমি তখন খুব উদাস হয়ে গিয়েছিলুম । চোখ ছুটোকে অত্যন্ত ভাবুকের মতে! করে চেয়েছিলুম নিশ্চয়, কিন্ত তখন নিজের চোখ আমি দেখতে পাইনি, গভীর গলায় বলেছিলুম, আমার জন্যে ভেবো না ভাই। আমি মারা গেলে পৃথিবীতে কার কী আসে যায়! দেখতেই পাচ্ছ, ব্যাঙ্কে চাকরি করি। হাজারে হাজারে পরের টাকার হিসেব লিখছি অথচ, নিজের বেলায়-_ এমন একটা থার্ড ক্লাস জীবনের কোনে মানে হয়? অথচ তোমার মূল্যবান জীবন-__ তপন বলেছিল, আমিও তো ব্যা-ব্যা-_ না ভাই, আমি আপত্তি করছি। তুমি কোন্‌ হঃখে ব্যা- ব্যাকরবে --ধুত্তোর ! ব্যা-ব্যা নয়-_ব্যা-ব্যা-_ত্যাঙ্ক! আমিও তো৷ সেই কী বলে-নসেই ব্যা-ব্যা _ফুলোয় যাক, চাকরি করি। কার্জেই, গ্লান শোনাবার নিমম্দ্ণ ৩ এক সঙ্গেই না হয় কা-ক্যা-ক্যা- ওর “ক্যা-ক্যা” জিজ্ঞাসার সঙ্গে আমাকেই “আনসার*টা জুড়ে দিতে হয়েছিল__কী আর করা! কিন্তু এটা বেশ বুঝতে পেরে- ছিলুম, তপন আমার সিগারেট খাবেই এবং সেজন্যে আমার সঙ্গে সহমরণে যেতে পর্ধস্ত প্রস্তুত আছে । রবিবার সকালে মেসের চাকরকে দিয়ে সবে এক বাক্স সিগারেট আনিয়েছি এবং একটা ধরিয়েছি-__সঙ্গে সঙ্গে এক গাল হাসি নিয়ে তপনের প্রবেশ । কী করে যে টের পায়--আশ্চর্য ! চকিতে মাথার ভেতরে একটা পরিক্ষার পরিকল্পন1 এসে গেল। তপন ঘরে ঢুকতেই বেশ কায়দা করে সিগারেট প্যাকেটটা ছুড়ে দিলুম ঘরের কোণায়। বললুম, ষাঃ__ফুরিয়ে গেল ! _-বটে--তাই নাকি ? তা হলে খালি প্যাকেটটাই আমি নিই, কী বলো !?--তপনের হাসি কান পধন্ত ছড়িয়ে গেলঃ ব্রাদার, আমার সঙ্গে চালাকি? খালি প্যাকেটে কখনে। অমন চপ করে শক হয়? বিষাক্ত দৃষ্টিতে চেয়ে দেখলুম, ঠিক কুড়িয়ে নিয়েছে। ব্যাজার হয়ে ভাবছি, ছু'চোবাজীর বারুদ মিশিয়ে ওর জন্যে একটা স্পেশাল সিগারেট তৈরী কর! যায় কিনা--তধন এসে আমার পাশে বসে পড়ল। ডাকল, সুকুমার ? _ন্ছ। __স্ুকুমার, শুনছ? _শুনব না কেন ?--তপনের পকেট থেকে বিহ্্যৎ বেগে আমি প্যাকেটটা পুনরুদ্ধার করলুম ঃ দেখতেই তো পাচ্ছ_-নাকের ছু দিকে ব্যালান্স করে একজোড়া বড়ো বড়ো কান খাড়া হয়ে আছে। _-আছে নাকি ?--তপন হা হা! করে হাসল £ আমি ভেবেছিলুম্‌ দুটোই কাটা গেছে বোধ হয়। ৪ তপন-চাঁরস্ক রসিকতা । পিত্তি পর্যন্ত জ্বলে গেল আমার । গন্ভীর হয়ে বললুম, বাজে কথা থাক। কিছু বলবার থাকলে বলো। -_-বলতেই তো এসেছি, কিন্তু তুমি এমন ছোটলোক হয়ে গেছ যে একটা সি-সি-সি-_তপন একেবারে ছি-ছি করতে লাগল । তারপর গোটা কয়েক লম্বা লম্বা টানে সিগারেটটা শেষ করে বললে, গান শুনবে? _-তুমিই শোনাতে চাও নাকি 1--আমার রোমাঞ্চ হলো £ এক- বার আর্টিস্ট হয়ে তুমি আমার পিলে চমকে দিয়েছিলে, প্রান শোনালে-_মানে টু বি ভেরী ফ্র্যাঙ্ক-_ক্যানসার হওয়া পর্যস্ত অপেক্ষা আমায় নাও করতে হতে পারে ! _শাট আপ !-_-তপন চটে গেল £ আমি গাম শোনাব কেন ? শোনাবেন আমার পা-_পা_পাঁ _ তোমার পা শোনাবেন, তোমার পা কি গান গাইতে পারেন ? শুধু তোমার কেন, পৃথিবীর কোনো পদমর্যাদাসম্পন্ন লোকের পায়েরই কি গান গাওয়া সম্ভব ? আমার সংশয় তপনকে জানাতে হলো । _ আঃ ইয়াফি নয় সুকুমার । গান শোনাবেন পা-_পারুল পিসিমা । যাক, এতক্ষণে নিশ্চিন্ত হওয়া! গেল । --কিস্তু তোমার পারুল পিসিমা আমাকে প্লান শোনাবেন কেন? আমাকে তো চেনেন না। --তোমাকে ঠিক চেনেন না বচে-_-সরু গৌঁফের ভেতর থেকে তপন মিটমিট করে হাসল £ কিন্তু কী একটা গল্প-মানে মধ্যে মধ্যে কাগজপত্রে যেসব রাবিশ তোমার ছাপা হয়, ছ্ারই একটা পড়ে দারুণ উত্তেজিত হয়েছেন। তাতে তৃমি গান সম্বন্ধে কী যেন লিখেছিলে, পিসিম! বলেছেন, লোকটি দারুণ গুনী--একে আমি গান শোনাব। শুনে বেশ খানিকটা উৎসাহ গ্রস বটে কিন্তু গান শোনাবার নিমম্ণ ৫ সন্পেহ গেল না। _ইয়ে-কী বলে, কিছু মনে কোরো না ভাই--+তোমার পিসিমা--মানে সেই রকম গান করেন না তো--যা শুনে প্রাণ ত্রাহি ত্রাহি করে, উধ্বশ্বাসে লোকে-_ _-আরে নানা! পা-পা-পারুল পিসিমা চমৎকার গাইতে পারেন, কীর্তন, ভ-ভজন, বাউল-_সবগুলোতে একপার্ট। বাইশটা মেডেল আছে, তার তিনটে অবিশ্যি টিনের। _-টিনের ? টিনের কেন? - আরে সব জো জো- জো মানে চোর। রুপোর বলে চালিয়ে দিয়েছে--তপনের মুখে ধিক্কার ফুটে বেরুল ঃ কাউকে বিশ্বাস করতে আছে নাকি ছৃনিয়ায়? মরুক গে, আজ বিকেলে তোমার গান শোন! আর "হাই টা? খাবার নেমস্তন্ন। _হাই টী ?_-আমি কান খাঁড়া করলুম । _ন্'। চায়ের সঙ্গে গরম কাটলেট, মাংসের সিভাড়া, পুডিং আর বলতে হলে! না-আমার আপাদ-মস্তকে শিহরণ জাগল। মেসে কী খেয়ে না দিন কাটছে। “হাই টী'র প্রস্তাব শুনেই আমার মনের ভেতর ট্রা-লা-লালা” করে একটা বিলিতী গান গুনগুন করে উঠল। --আলবাত। তবে তো! যেতেই হয়। এমন গান শোনবার সুযোগ কিছুতে ছাড়া যায় না।-_-তপন এর ভেতরেই আবার আমার সিগারেটের প্যাকেটট দখল করেছে, কিন্তু দেখেও আমি দেখতে পেলুম না £ কখন যেতে হবে- কোথায় যেতে হবে? --পীচটায়। সে আমি এসে তোমায় নিয়ে যাব। তুমি কোনো চি-চি-চি নানা আমি কোনে! রকম চিচি করব না। যা করবার তুমিই করো । তপন একটু চুপ করে রইল। তারপর বললে, শুধু একটা ৬ তপন-চারত কথা আছে ভাই। যাওয়ার সময় কিছু চকোলেট-টফি-_-এসব নিয়ে যেয়ো । _চকোলেট-টফি আমি আশ্চর্য হলুম ; কেন, পিসিমাকে প্যাল৷ দিতে হবে নাকি? ধু পিসিমা প্যা--প্যা-মানে নেবেন কেন? আমার ছুটি পিসতুত্তৌ ভাই আছে, একটার পাচ বছর আর একটার সাত। ওরা একটু ওগুলো ভালোবাসে, মানে চায়-ায়। সত্যি বলতে কি ভাই, পিসিমার গান ভালো, খাওয়ানও ভালো, কিন্তু ওদের জন্যেই পিসিমার বাড়িতে আমার যেতে ইচ্ছে করে না। তপনের “মীননেস” দেখে আমার মেজাজ খারাপ হয়ে গেল, ওর হাত থেকে সিগারেটের প্যাঁকেটটা কেড়ে নিলুম আমি। ছুটি -শিশু-_কবি যাদের সম্পর্কে বলেছেন “নন্দনের এনেছে সংবাদ _-ইহাঁদের করে! আশীরবাদ”_-তাদের দুটো চকোলেট কিনে দিতেও তপনের মন খারাপ হয়ে যায়! তার ওপর আবার পিসতুতো ভাই! ঠিক করলুম, এর পরে ওর কাছ থেকে. আমি সিগারেটের দাম আদায় করব। বললুম, তুমি তো আচ্ছা ছোটলোক হে! ছৃটো বাচ্চা_ আহা-_হাই টীর কথ! মনে পড়তে আমার স্বর আরো মধুমাখা হয়ে উঠতে লাগল £ এই তো ওদের চকোলেট খাওয়ার বয়েস ! তুমি কি আশা করো ওরা তোমার কাছে চকোলেট না চেয়ে এক কলকে তামাক চাইবে ? তপন সরু গৌঁফের ফাকে একটু হাসল-বেশ আধ্যাম্ত্িক রকমের হাসিটা । বললে, আচ্ছ?, পাচটার সময় আমি আসব। তৈরি থেকো ।--তার পরেই খপ করে আমার হাত থেকে সিগারেটের প্যাকেটটা কেড়ে নিয়ে বললে, এটা খালি প্যাকেট-_তুমি ফেলে গান শোনাবার নিমম্্রণ ৭ দিয়েছিলে । এখন এটা আমার প্র-প্র-্র- প্র-পরা-অপ” ইত্যাকার অবশিষ্ট উপসর্গগুলো অন্ুচ্চারিত রেখেই তপন বেরিয়ে গেল ঘর থেকে । আমি হী-হা করে ওঠবারও সময় পেলুম না । তখনই বোঝা উচিত ছিল, গান শোনানো আর হাই টী খাওয়ানোর ভেতরে নির্ধাৎ একটা পাচ আছে কোথাও। যে রকম বিচ্ছিরি দিনকাল, তাতে খামোঁকা কেউ কাউকে গান শুনিয়ে পুডিং কাটলেট খাওয়ায় না। আমার মামাতো ভাই নগেনদাকে একবার ট্রাম গাড়িতে পাশের লোকটি একটা মস্ত গোলাপ দিয়ে বলেছিল, পেশোয়ারী গোলাপ স্যার-আপনাকে প্রেজেণ্ট করলুম । হাসি-হাসি মুখে নগেনদা বিভোর হয়ে পেশোয়ারী গোলাপ শুঁকছেন, সেই ফাকে লোকটা তার পকেট মেরে ছুশো টাকা স্থদ্ধ, মনিব্যাগটা নিয়ে পালিয়ে গেল ! আপাতত নগেনদার সেই করুণ কাহিনীটা বার বার মনে পড়ছে আমার। পিসেমশাই চা বাগানের ম্যানেজার, অবস্থা তার ভালোই দেখা গেল। জাকালো বাড়ি, সামনে মস্ত বাগান। গেট পেরিয়ে যেই ঢুকেছি, অমনি ছুটি গোলগাল আহুলাদে চেহারার ছেলে প্রায় মার মার করে তেড়ে এল আমাদের দিকে । -পোকাদা এসেছে -পোকাদা তপন চৌধুরীর “পোকাদা' বলে একটি মনোরম নাম আছে, এই তথ্যটি অবগত হয়ে মন পুলকিত হলে! । এবং ছারপোকা কিংবা গুবরে পোকা কোনটার সঙ্গে ওর বেশী সাদৃশ্য আছে সেটা বোঝবার চেষ্টা করছি, এমন সময়-_- তপন হাহা করে উঠল £ আমি নয়--আমি নয়--ওর কাছে ৬ তপন-চারত ---ওকে ধরো-- ওর কাছে? কার কাছে? কাকে ধরবে এবং কেনই বা ধরবে? এতগুলো জটিল জিনিস এক সঙ্গে অনুধাবন করবার আগেই সেই শিশু ছুটি তৎক্ষণাৎ আমাকে আক্রমণ করল। এক- জন আমার পায়ের ওপ্রর দাড়িয়ে উঠে বা পকেটটাকে হাতড়াতে লাগল, আর একজন ডান পকেট. থেকে টফির ঠোডাটা বের করে নিয়ে তীরবেগে ছুট লাগালে! । প্রথমটি তখন পকেট থেকে রুমাল, চাবি, ছু চার আনা খুচরো পয়সা_সব মুঠো করে ছুড়ে ফেলছিল। আত্মরক্ষার জন্যে একটা চড় প্রায় তুলে ফেলেছি--এমন সময় আর একজনের হাতে ঠোউ'টা দেখেই সে তাড়া করল তাকে । পরের অধ্যায়টা আর জানা গেল না, কারণ ছুজনেই ততক্ষণে অদৃশ্য হয়েছে। খানিকক্ষণ হা করে থেকে আমি বললুম, তা হলে এরাই-_ বিষগ্রতভাবে মাথা! নাডল তপন । -ুঃ এরাই । গাবু আর টাবু । ভগবানের স্স্স্পেপে_- _্স্পেশ্যাল-_ _-ক-কর-ক্রিয়েশন ! মাটি থেকে রুমাল-চাবি কুড়িয়ে নিয়ে পয়সাগুলো খুঁজতে খুঁজতে বললুম, টফিগুলো হাতে করে দেবার তরও সইল না দেখছি। একটু ক্ষুধিত ছিল মনে হচ্ছে। | _-ক্ষুধিত ? এরা সব সময়ই ক্ষুধিত থাকে । যাকে বলে মহাবুভুক্ষা | --আমার পাঞ্জাবীর পকেটটা একটু ছি'ড়েও দিয়েছে হে। -আর আমার কণ্টা ছি'ড়েছে, জানো ?1--সরু গৌফের ফাকে তপন মিটমিট করে হাসল ঃ বা-বারোটা! | --আযা 1 নিদারণ আতিষ্কে আমি আর্তনাদ করি ; বলো! কি হে, শেষ পর্যস্ত ভদ্র পোশাকে ফিরতে পারব তো? গান শোনার নিমম্মণ ৯ _-ভ-ভগবানকে ডাকো । _-তার মানে ?--আমার মাথার চুল খাড়া হয়ে গেল ঃ তুমি, কি বলতে চাও-_ ও যে কী বলতেচায় সেটা আপাতত জানা গেল না। কারণ পারুল পিসিম! এসে পড়লেন। আর তার পিছনে টাক মাথা যে বেটে-খাটো। ভদ্রলোক গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে এলেন, তাকে পিসেমশাই বলেই সন্দেহ হলো আমার । _গাবু-টাবু এসেছিল বুঝি ?__ পারুল পিসিমার গোলগাল মুখ থেকে স্বগর্ণয় বাৎসল্য উছলে পড়ল £ ছেলে ছুটোর ভারী মায়ার প্রাণ। লোকজন দেখলে তক্ষুনি ছুটে আসে । _আর দেখতে দেখতে আপন করে নেয় ।--পিসেমশাই সন্সেহে সংযোজন করলেন। আর পত্রপাঠ পকেট মারে--এইটে বলতে গিয়েও আমাকে সামলে নিতে হলো । তখন পিসিমার দৃষ্টি আমার ওপর গিয়ে পড়ল। __তুমিই তো স্বকুমার ? করজোড়ে বললুম, আজ্ঞে । পারুল পিসিমা কিছুক্ষণ মুগ্ধ চোখে আমার দিকে চেয়ে রইলেন। তারপর বললেন, তোমার “আলে! ঝলমল সন্ধ্যা” বলে একটা গল্প পড়ে আমি রীতিমতো স্তম্ভিত হয়ে গেছি। তুমি লিখেছ : মুন্ন, মিঞা তখন মনের খুশিতে চৌতালে একখান! দিলরুব! গাইছিল।” চৌতালে দিলরুবা গাওয়া যায় এ কথা কে কবে ভেবেছিল ! পিসেমশাই বললেন, আর দিলরুবা বলে একটা স্বর আছে _-একথাই ব! কে কবে শুনেছে । আমরা জানতুম ওটা একরকম বাজনা । পিসিম! বললেন, ভেবে দেখো, আমরা কত কম জানতুম ! আর পিসেমশাই বললেন, আরো ভেবে দেখো, গল্প লেখকেরা ১০ তপন-চারত আমাদের চাইতে কত বেশি জানেন !__ আবেগে পিসেমশাইয়ের টাকটা পর্যস্ত চকচক করতে লাগল। ওদের এই ভাবনার প্রতিযোগিতায় আমার কি রকম অস্বস্তি লাগতে লাগল। প্রায় বলতে যাচ্ছি, দিলরুবা এক রকমের জাপানী গজল--পিসে মশাই-ই বাধা দিলেন বললেন, রাস্তায় দাড়িয়ে দাড়িয়ে কি আর কথা হয় ? চলো-চলো--ভেতরে চলো-_ ভেতরে পা বাঁড়াতে আমার ঠিক সাহস হচ্ছিল না-_-সেই মায়ার প্রাণ ছেলে ছটির পুনরাক্রমণের সম্ভাবনায় শিহরণ জাগছিল সবাঙ্গে। কিন্তু এখন আর ফেরা যায় না। তা ছাড়া তৎক্ষণাৎ ছাই টী'র কথাও মনে পড়ে গেল। আর পিসিমার গোলগাল হাসি হাসি মুখখানা দেখে এমনও সন্দেহ হচ্ছিল যে পুডিং কাটলেটের ব্যাপারটাও নেহাত মন্দ জমবে না। শুধু তপনকে একবার বললুম, ভাই পোকাদা-_ হাডির মতো মুখ করে তপন বললে, এগোও ! তা হলে এগোই । কবিগুরু বলেছেন, “নির্ভাবনায় ঝাপ দিয়ে পড়” ইত্যাদি। কী “রবে আর রবে না-সেটা এখনো জোর করে বলা মুশকিল। কারণ সেই শিশু ছুটির আর একবার আবির্ভাব ঘটলে জামা-টামা আস্ত নিয়ে ফেরা যাবে কি না, সে ব্যাপারে এখনো নিঃসন্দ্হে হওয়া যাচ্ছে না। মনকে ভরসা! দিয়ে বললুষন, ঠোঙায় আধ পাউও্ড টফি ছিল-_সেগুলো শেষ করে আনতেও তো! পময় লাগবে ! পিসিমা আর পিসেমশাই আমাদের ড্রয়িংরুমে নিয়ে এলেন। সোফা চেয়ার নেই--ঢালাও ফরাস পাতা । সঙ্গীত শিল্পীর ঘর যেমন হয়ে থাকে । কোণায় ঠেসান দেওয়া তানপুরা, ফরাসে হারমোনিয়াম আর 'বীয়াতবলা। শিশু ছটিকে কাছাকাছি দেখ! গেল না--গানের আসরে আসে বিরক্ত করবে না বলেই ভরস! হলে! । | গান শোনাবার নিমম্প্রণ ১১ বোসো--বোসো-বলে পিসিমা ধ1 করে নিজেই বসে পড়লেন এবং তৎক্ষণাৎ হার্মোনিয়াম টেনে নিলেন। আর পিষেমশাইকেও তবলা-বায়ার পাশে আসন নিতে দেখা গেল। তপন আমার কানে কানে বললে, পিসেমশাই খুব ভালো তবলচী। অর্থাৎ একজন সঙ্গীত করেন, আর একজন সঙ্গত। আদর্শ জীবন সঙ্গী একেই বলে-_এরই নাম সঙ্গদান । পিসিমা! বললেন, মুশকিল কি জানো সুকুমার, দেশে সমঝদার নেই। এত ভালো গান শিখেছি আমি--বাইশটা মেডেল আছে আমার ( আমার মনে পড়ল, তার তিনটে টিনের )-_-তবুও শৌনাবার লোক পাওয়া যায় না । শহরের লোকগুলো ষে এত বেরসিক কী বলব! এই পোকাটা ( তপনের মুখটা বিচ্ছিরি হয়ে গেল ) আগে তবুমাঝে মাঝে আসত, এখন ওর টিকিও দেখবার জো নেই। কিন্তু বিছ্েটা যখন শিখেইছি, তখন লোককে না শোনালে কি ভালো লাগে ? তুমিই বলো ! -_ আজ হ্যা, ঠিকই বলেছেন । হার্মোনিয়ামের একটা রীড টিপতে টিপতে পিসিমা বললেন, তা হলে চাঁ-টা কি এখুনি খাবে 1 না গান শুনে-__ অত্যন্ত উৎসাহের সঙ্গে বলতে যাচ্ছিলুম, মন্দ কা, হয়ে যাক না-_কিন্ত পিসেমশাই বাগড়া দিলেন । একটা ছোট হাতুড়ি দিয়ে তবলার কী সব ঠকছিলেন, বললেন, আরে নানা, চায়ের জন্য ব্স্ত হচ্ছ কেন? সুকুমার কি রকম গুণী ছেলে দেখতে পাচ্ছ না? ও চৌতালে দিলরুবা গাইতে পারে-তুচ্ছ চায়ের জন্তে এসেছে নাকি এখানে? চানা হলেই বাকি আসে যায় ওর? গানই হচ্ছে আসল কথা_-তার টানেই তো! এমন করে ছুটে এসেছে ! কী সর্বনাশ! চা না হলেই বাকী আসে ষায়? এমন বিপজ্জনক সম্ভাবনার জন্তে কে তৈরী ছিল! আধ পাউণ্ড টফি ১২ তপন-্টারত বিনি-পয়সায় পাওয়া যায়নি, গাবু-টাবুর জন্যে নিজের ভবিষ্যৎ এখনো অনিশ্চিত, একমাত্র ভরস! হাই-টীও বরবাদ হবে নাকি শেষ পর্যস্ত? আমি তপনের কানে কানে কাতরম্বরে বললুম, ভাই পোকাদা-- তপন দীত খি'চিয়ে বললে, শাট আপ! পিসিমা জিজ্ঞেস করলেন, কী বলছ ? _কিছু নাকিছু না!_তপন জানালো । স্থকুমার বলছে, চা না হলেও ওর চলবে-_গাঁ-গা-_গানই হোক ! কী বিশ্বীসাতক । পোকাদ। বলে ডেকেছি বলেই কি এ রকম প্রতিহিংসা! নিতে হয়? আমি তারম্বরে প্রতিবাদ করতে যাচ্ছিলুম, কিন্ত তার আগেই পিসিমা' গান ধরলেন। ভজন। আর পিসেমশাই পত্রপাঠ বায়া-তবলাকে আক্রমণ করলেন। গান-টান আমার কাছে গ্রীক ভাষার চাইতেও জটিল, কিন্ত মিনিট কয়েক শুনে মনে হলো, পিসিমা ভালোই গান। মিষ্টি দরাজ গলা--অনেকদিন ধরে সাধনা করেছেন বোঝা যায়। আরে! মনে হলে! পেট ভর! থাকলে ঘণ্টা ছুই তার গান শোন! আমার পক্ষেও নেহাত অসাধ্য ব্যাপার নয়। হাই-টার কথ! ভুলে গিয়ে আমিও একটু জমে উঠেছি, তালে তালে মাথা! নড়ছে, এমন সময়_- দ্রুত গাবু ও টাবু অকুস্থলে প্রবেশ করল। ডাকল? পোকাদা --পোকাদা--- তপন আগে থেকেই তৈরি হয়ে ছিল। - আমি নয়__ আমি নয়-__এই সুকুমারকে ধর-- : তার নিজের ভূত ছুটিকে পত্রপাঠ আমার দিকে চালান করল সে। গাবু এবং টাবু-কোন্টির কী নাম কে বলতে পারে, একটি ধপাৎ করে আমার কোলে বসে পড়ল, আর অবিলম্বে হু পাশের পকেট সন্ধান করতে লাগল। দ্বিতীয়টি আমার কীধেরওপর পাড়ের ময়নার মতো! অধিষ্ঠিত হল এবং আমার বুক : গান শোনাবার নিমস্ঘণ ১৩ ঢুকিষে দিলে । আর সমম্বরে শোনা গেল £ চকোলেট--চকোলেট-- - এখন নেই, পরে কিনে দেব- ক্ষীণকণ্টে বক্তব্য জানিয়ে আমি গাবু-টাবুর হাত থেকে নিস্তার পাবার চেষ্টা করতে লাগলুম। ফলে কোলেরটি আরো ভালো করে গদিয়ান হয়ে বসল এবং কাধেরটি বেশ শক্ত হাতে আমার চুলগুলো আকড়ে ধরল। খুব আরাম বোধ করলুম না-_-বলাই বাহুল্য ! _ আছে চকোলেট, তুমি লুকিয়ে রেখেছ-_বলে একজন আবার ছ পকেটের সর্বস্ব চারদিকে ছড়িরে ফেলতে লাগল আর সিগারেটের প্যাকেটট! বেরুবা মাত্রই বিছ্যুৎগ্রতিতে সেটাকে হাতিয়ে ফেলল তপন। দ্বিতীয়জ্রন আমার কাধের ময়র সিংহাসনে আসীন থেকে টপ করে চশমা জোড়া খুলে নিলে । --আহা-হা, করছ কী, চশমা দাও-_চশমা দাও-_ পারুল পিসিমা বিভোর হয়ে গান গাইছেন--এ সব তুচ্ছ ব্যাপার তিনি দেখতেও পেলেন না। পিসেমশাই তবলা বাজাতে বাজাতে এক ঝলক মধুর হানি বিতরণ করলেন আমার দিকে । অর্থাৎ যেন বলতে চাইলেন £ তোমাকে কত ভালোবাসে দেখে নাও একবার। চশমা দাও বলছি-_ -_চকোলেট. দাও তবে--বলেই আমার ব! কানে পুটুস করে চিম্টি কাটল। আর একজন এবার ফীড়িয়ে পড়ল। পা ভন্তি ধুলো- আমার কাপড়জাম। তচনচ. করে দিয়ে ধাই করে নাকের নিচে খাম্চি দিলে একটা । বললে তোমার গোঁফ নেই কেন ? স্বন্ধাসীনটি এবার বট করে পকেটের ফাউণ্টেন পেনটা তুলে নিয়ে বললে, জানিস, ওর গৌফ শেয়ালে খেয়ে নিয়েছে । ছটি নন্দনের শিশু পরম পুলকে হেসে উঠল। এমনকি ১৪ তপন-চারত পিসেমশাই পর্যন্ত মিট মিট করে হাসলেন তাই শুনে। বাংসল্য রসে চোখ ছুটি চিকচিক করতে লাগল তার। ংস অত্যন্ত খারাপ লোক ছিলেন, তিনি পত্রপাঠ ভাগ্নেদের সংহার করে বসতেন । কিন্তু এই বালক ছুটির জন্যে একটি কংস মামা জন্মগ্রহণ করলে কি খুব অন্যায় হত সেটা! ? কাধের শিশুটিকে প্রাণপণে নামাবার চেষ্টা করতে করতে এইসব বীভৎস এবং অন্যায় চিন্তা আমাকে পেয়ে বসতে লাগল। কিন্তু এদের কোনে৷ কংস মামা জন্মাননি এবং কাধের ভূত যে ইচ্ছে করলেই নামানো যায় না, সেটা বুঝতেও দেরি লাগল ন|। আবার চুলের মুঠিতে আরো শক্ত টান পড়ল, দ্বিতীয় শিশুটি প্রথমটির হাত থেকে আমার চশমাজোড়া সংগ্রহ করে ফেলল, আর আমার ঘাড়ের ওপর কেউ পিন দিয়ে আচড়াচ্ছে বলে মনে হলো । অন্নুমান কর! গেল আমারই কলম দিয়ে বোধ হয় কিছু লেখা হচ্ছে ওখানে ॥ কিন্তু ঘাড় যে ঠিক বিদ্যার্চার জায়গা নয়--এই কথাট! কিছুতেই বোঝানো গেল না। করুণ সুরে বললুম, ভাই তপন-_ র্ _আমি তো গোড়াতেই বলেছিলুম । বলেছিল বটে, কিন্তু একজোড়া মহীরাবণ যে আমার জন্যে অপেক্ষা করে আছে, ঘুণাক্গরেও তো তার আভাস দেয়নি। তাহলে কে আসত এ বাড়ির ত্রিসীমানায়! এতক্ষণে কোনো রহস্য আর আমার অজানা রইল না। পিসিমা ভালোই গান, তবু যে কেন লোকে তার গান শুনতে আসে না, এমনকি হাই-্টীর লোডেও নয়-_সেটি হাড়ে হাড়ে বোধগমা হলে! আমার। পারুল পিসিমার ভজন শেষ হলো । একবার তার বংশধরদের দিকে চেয়ে দেখলেন । _ঘাড়ে উঠেছ কেন টাবু? নামো। পর উত্তরে আমার স্বন্ধ দেশের ওপর থেকে--ই--কি'চ--+ বলে গান শোনাবার নিমম্প্রণ ১৫ শব্দ হল একটা । অনুমান করলুম, টাবু ভেংচি কাটল । আর পিসেমশাই তেমনি মধুর হেসে বললেন, দেখেছ, আসবার সঙ্গে সঙ্গেই কি রকম হ্যাঁওটা হয়ে উঠেছে ওর! এবার পিসিমা বললেন, হু-_ওদের খুব মায়ার প্রাণ।-_ আর বলেই চোখ বুজে কীর্তন ধরলেন। আমার নাভিশ্বাস উঠবে বলে মনে হলো ! ঘাঁড়ের ওপর কলম দিয়ে সমানে বিদ্যাঁচ্চা হচ্ছে, একজন আমার নাকটাকে খিমচে চলেছে । আর ক্রমাগত শুনতে পাচ্ছি ঃ শীগ গীর চকোলেট দাও-_দাও বলছি পিসিমা গাইছেন £ “মরিব মরিব সখি, নিশ্চয় মরিব।” আমার মন বলছে--"মারিব__মারিব আমি নিশ্চয় মারিব। কিন্তু মারবার জো কী। পিসিম! চোখ বুজে আছেন বটে, কিন্ত পিসেমশশয় ঠিক লক্ষ্য করছেন আমাকে অথবা তার শিশুছটিকে। নিজে টিকেট কেনো--মালের উপর নজর রাখ-- রেল কি এই আশ্চর্য বাণীটি তিনি মর্মে মর্মে বুঝেছেন বলেই মনে ভাবলুম, এইবারে ধূর্জটির মতো উঠে ডাই হোক একটা প্রলয়-কাণ্ড ঘটে যাক, ঠিক তখন-_ দৈববাণীর মতো তপনের কণ্ঠস্বর শোনা গেল £ চলে আয় টাবু-গাবু, তোদের চকোলেট কিনে দিই। _ই-_কি'চ-_আমার কাধে আনন্দ ধ্বনি উঠল। এক লাফে নেমে পড়ল টাবু, কলমটা কোলের ওপর খসে পড়ল--এক ছোপ কালি লাগল কাপড়ে । আর গাবু আমার চশমাটা ছু'ড়ে ফেলে দিয়ে তৎক্ষণাৎ তপনকে অনুসরণ করল। মুক্তি। কিন্ত ততক্ষণে আমি বিধ্বস্ত, বিচুর্দিত-_এক কথায় প্রায় নিহত! জামা-কাপড়ের অবস্থা বর্ণনার বাইরে, নাকে মুখে গালে জালামরী অনুভূতি, কলমটা দিয়ে আর লেখা যাবে কিন! সন্দেহ, চশমাটা জর্ের জন্যে রক্ষা পেয়েছে । পিসিমা গাইছেন, “মরিলে ঝুলায়ে বু তপন-চরিত রেখো তমালেরি ডালে'__-আমি ভাবছি জ্বীবিত অবস্থায়ও কাউকে ঝোলানো যায় এবং এই মুহুর্তেই ঝোলানো উচিত! কতক্ষণ কাটল জানি না। বোধ হয় মিনিট পাঁচেক বজ্রাহত হয়ে বসে আছি আর সেই ফাকে পিসিমা! আর একখান! কীর্তন ধরেছেন, ঠিক তখন-_- দরজার বাইরে ছুটি কচি গলায় “হাঁরে-রে রে" গোছের হাক উঠল এবং আমার হৃংপিও্কে স্তব্ধ করে দিয়ে আবার ছুই মহীরাবণ এসে প্রবেশ করল । এবার শিশুপাল বধ করব- নির্থাং। একটা চড় তুলে আমি তৈরী হয়ে গেলুম । কিন্তু-_ কিন্ত এবার ধা ঘটল তা সম্পূর্ণ অভাবিত। ছুই শিশুর হাতে ছুটি ছোট ছোট পেন নাইফ চিক চিক করে উঠল । একজন চক্ষের পলকে হার্মোনিরামের বেলোটি ফীাসিয়ে দিলে, আর একজনের অস্ত্রাথাতে বিকট আওয়াজ করে তবলার চামড়া ছুভাগ হয়ে গেল ! পারুল পিসিমা আর্তনাদ করলেন, আর পিসেমশাই কয়েক সেকেণ্ড বজ্াহত হয়ে বসে রইলেন। চোখ ভরা বাৎসল্য জেহ এক মুহূর্তে নিদারুণ জিঘাংসায় পরিণত হলো, ছুটি সন্তানের কান ধরে বেড়ালছানার মতো! শূন্তে তুলে নিলেন, দীতে ধাতে ঘবে বললেন, লক্ষ্মীছাড়া, বাদর, আনব তোদের আমি-- আর তপন আমার কানে কানে বললে, সুকুমার কুইক ! কিসের কুইক, কোথায় কুইক-_কিছু বলবার ঘরকার ছিল না। ছ জনেই উধ্বশ্বাসে ছুটে বেরুলুম। দূর থেকে চটাস চটাস করে বতো টাটির আওয়াজ আসছে__পিসেমশাই নতুন ছটি বায়া-তবলায় হাত পাকাচ্ছেন নিশ্চয়। রাস্তায় এসে সেই অবস্থাতেই একটা রিকশয় লাফিয়ে.উঠলুম আমরা । মিনিট তিনেক গেল দম ফিরে পেতে। তারপর তপন বললে, ভে-ভৈনডেটা। ছ বছর ধনে গান শোনাবার নিসম্রণ ১৭ না-লা-লাইফট! হেল করে দিয়েছিল। আজ বাইরে নিয়ে গিয়ে দু-খানা ছুরি কিনে দিয়ে বলেছি, হাঁ-হার-হার-হার--মরুক গে, আর তবলায় অত মিঠে আওয়াজ বেরোয় কেন জানিস না? ওর ভেতরে অনেক চ-চকোলেট আর লজেন্স লুকোনে! থাকে কিনা-_ তাই। তারপরেই বা-বা-ব্যাস! . হাই-টা জুটলনা, কিন্তু প্রাণটা যে অন্তত বেঁচে গেল, এই কৃতজ্ঞতাতেই তপনের কাছ থেকে সিগারেটের প্যাকেটটা আমি আর ফেরত চাইতে পারলুম না ! তপন আমার মুখের দিকে কিছুক্ষণ কটমট করে তাকিয়ে রইল । তারপর প্রশ্থ করল : তোমার ধারণা-_তুমি সাহিত্যিক? কথাটা মর্মে গিয়ে বিধল। গোটা কয়েক গল্প লিখে নিজের সন্বদ্ধে ধারণাটা জন্মাতে যাচ্ছিল বটে, কিন্তু সম্প্রতি একজন সমালোচক আমার লেখার ওপর আড়াই লাইন মন্তব্য করে জ্বানিয়ে দিয়েছেন কলম ধরাটাই নাকি আমার পক্ষে অনধিকারচর্টা। ভারপর থেকে” কাতর হয়ে ৰললুম, না ভাই, না। আমি ওসব উচুদরের জীব নই। তপন একমত হল। বললে, নও ষে সে তো দেখতেই পাচ্ছি । তুমি এক নম্বরের অপদার্থ আর আড্ডাবাজজ। আসল কথা হচ্ছে, কাল সারাদিন তুমি তাস খেলবে আর সন্ধ্যেবেল৷ নিশ্চয় হিন্দী ফিলিম . দেখতে যাবে। তোমার ষদি এতটুকুও ইম্যাজিনেশন থাকত, তা হলে এমন ন্থযোগ তৃমি কিছুতেই ছাড়তে না । পাহাড়ের কোলের ভেতরে একটি ছোট বাংলো--পাশ দিয়ে তার ঝিরিঝিরি ঝরনা-__-বনের মধ্য থেকে অচিন পাখির ডাক-_ কলেজে পড়বার সময় তপনের তোৎলামো ছিল৷ ক্রিকেটকে বলত £ “কৃ-কৃ-ক£রিকেট”, কিন্তু ব্যাক্কে একটা ভালো চাকরি পাওয়ার পর ভাষার ওপর ওর বেশ দখল এসেছে দেখা গেল। আমি জিজ্ঞেস করলুম, অচিন পাখিরাই বুঝি ডাকাডাকি করে ওখানে? চেনা পাখিদের বোধ হয় ডাকতে মেই ? তপন চটে গেল। --ইয়ারকি করতে হবে না। ইচ্ছে হয় চলো_-নইলে আমি একাই যাব। ওখানে প্রচুর বনমুরগী আছে শুনেছি, নিকুঞ্দার বন্দুকও রয়েছে এইবারে আমি আকর্ষন রোধ করদুষ ৃ অনেক বনমুরয়ী আছে বৃঝি ? স্গুলো। খেড়েও নিশ্চয়” - একি মনোরম দিবস ৯৯ -অঞ্কুত। কিন্ত তোমার তো ওসবে ইণ্টারেস্ট নেই। তুমি পোস্টমাস্টারের ওখানে গিয়ে সারা ছুপুর তাসই খেলো। আমি একাই বেরিয়ে পড়ব ভোরের বাসে। আমি তাড়াতাড়ি বললুম, না-ন।-_একটু ঠাট্টা করছিলুম। আমিও যাব। সত্যি বলছি, ভাই, পাহাড়ের কোলে ছোট্ট একটি বাংলো-_ঝিরঝিরি বারনা, আর কী বলে--ওই । অচিন-পাখির ডাক--ওসব আমার ভালোই লাগে । এইখানে ব্যাপারট। একটু খুলে বলি। বছরখানেক হলো হিমালয়ের কোলের কাছে এই ছোট শহরটিতে বদলি হয়ে এসেছি । এবং যেমন হয়ে থাকে-কিছুদিনের ভেতরেই পাহাড়-জক্ষলের ওপরে অরুচি ধরে গেছে । অফিসে ছ'ট। দিন গাধার খাটুনি__রবিধারের ছুপুরে পোস্ট মাস্টারের ওখানে তাসের আড্ডাটার জন্যে মনটা আকুল হয়ে থাকে। তপন এই শহরেরই ছেলে। কলকাতার কলেজে সহপাঠী ছিল, এখানে এসে আবার দেখা হয়ে গেছে । কোনদিন কবিতা লেখেনি বলে বরাবরই বেশ গভীর ধরনের কবি। বিকেলবেলা গড়ের মাঠে ওর সঙ্গে বেড়াতে গেলে ফিরে আসা শক্ত হয়ে ঈ্াড়াত। বলত : “এই সুন্দর সবুজ ঘাস ছেড়ে যেতে ইচ্ছে করে না।” আমি একবার জিজ্ঞেস, করেছিলুম, “এখনো বুঝি তোমার পেট ভরেনি ? তারপর হপ্তা হুয়েক কথাবার্তা বন্ধ ছিল। কিন্তু চিরকাল এই বনজঙ্গলের দেশে কাটিয়েও অচিন পাখির ডাকে মন উদাস হয়ে যায়_ও যে এত বড় মহাকবি আমার তা জানা ছিল না। ক”দিন ধরে বলছিল, ওর মামাতো! ভাই নিকুঙ্জদা নাকি এক আশ্চর্য প্রাকৃতিক পরিবেশে বাস করেন। ও সেখানে কখনো যায়নি, তবে শুনেছে তার চারদিকে ঘন বন, নীল পাহাড়ের মায়া, গান গাওয়া! ঝরনা ইত্যাদি ইত্যাদি। বলা বাহুল্য যে কোন একটা রবিবারে ও সেখানে যেতে চায় এবং যেহেতু আম্মি: কখনো কখনে। হুটো একটা গল্প লিখে থাকি, সুতরাং .. ২২ তপন-চাঁরত “মাসখানেক ধরে নানাভাবে আমি ওকে ঠেকিয়ে রেখেছিলুম । শেষ পর্যন্ত আর পারা গেল না। অচিন পাখিত্ধ ডাক নয়-- বনমুরগীর সম্ভাবনাই আমাকে উদাস করল। মুরগীর অসম্ভব দা এখানে-গত তিন মাসের ভেতরে রসনার সঙ্গে তাদের সম্পর্ক ঘটেনি ।' তপন যত খুশি প্রকৃতির শোভা দেখুক, আমি অন্যদিক থেকে পুষিয়ে নেব । অতএব পরদিন বেরিয়ে পড়া গেল। বাসে ঘণ্টা দেড়েকের রাস্তা । নামিয়ে দিলে মাঠের মাঝখানে । খবর নিয়ে জানা গেল, প্রায় মাইল ছুয়েক হাটতে হবে । _-বলো কি তপন, ছু মাইল ! তপন বললে, তাতে কী! গাঁন গাইতে গাইতে চলে যাব । তার মানে এই নয় যে তপন খুব ভালো গাইয়ে। প্রকৃতিদত্ত স্বাভাবিক ক্ষমতায় সে গান গেয়ে থাকে এবং তার এ ক্ষেত্রে একটা আশ্চর্য মৌলিকতা আছে। এক ন্থরে এক গান সে ছুবার গেয়েছে, পরম নিন্দ্ুকও তার সে অপবাদ দিতে পারবে না। বললুম, থাক-াক, গানের দরবঞ্চর নেই। মানুষের আর্টিফিশিয়াল গানে এমন ন্যাচারাল আ্যাট্মস্ফিয়ারটা! মাটি হয়ে যাবে। তার চাইতে জোর পায়ে এগোনো যাক। তপন একবার সন্দিপ্ধ চোখে আনার দিকে তাকালো । তারপর হাটা! শুরু করলুম ছুজনে । আধ মাইলটাক যেতেই পায়ে চল! পথের হু ধারে ঘন হয়ে নুয়ে পড়ল শ্যাম লতা আর ঘাসের বন। নীল পাহাড় ছিল বটে, কিন্ত দশ মাইলের এদিকে নয়। বুক সমান জঙ্গল ঠেলে এগোতে এগোতে আমি শেষ পর্ধস্ত দাড়িয়ে পড়লুম । -_-এই রাস্তা ? ' _-এই রাস্তা । -- _ন্ধিন্ত এ পথ দিয়ে তো মানুষ- হায় মনে হয় না। বাঘ" একটি মনোরম দিবস ২৩ ভালুকের মুখে নিয়ে যাচ্ছ নাকি ? তপন ভ্রক্ুটি করে বললে, শহুরে চাল ছাড়ো । গ্রামের রাস্তা এই রকমই হয়ে থাকে । এই শ্যামল বনানী--পাখির ডাক--এই নিবিড় ঘাস--উঃ ! অগতা! আমিও বলতে যাচ্ছি_-“আহা_আঃ- হঠাৎ দেখি নিদারুণভাবে পা চুলকোতে শুর করেছে তপন । --কী হলো ? _-তোমার কাছে তেল-ন্থন কিছু আছে হে শ্থকুমার ? _তেল-মুন! আমি আকাশ থেকে পড়লুম। _-তেল-নুন কোথায় পাৰ? আমি কি পকেটে করে রান্নাঘর নিয়ে বেড়াচ্ছি নাকি ? তপন একটু অপ্রতিভ হলো! £ না__না, তা নয়-_মানে বিছুটি লাগল কি না। বড্ড চুলকোচ্ছে। বললুম, ওটা যে প্রকৃতির স্সেহের পরশ ভাই । আঘাত সে যে পরশ তব-_ ৰ _থামো -_থামো !- তপন এগিয়ে চলল গৌঁজ হয়ে-_মাঝে মাঝে নুয়ে পড়ে পা চুদকোতে লাগল । আমিও হু'শিয়ার হয়ে গেছি--পায়ে চলা পথটায় চোখ রেখে এগোচ্ছি সাবধানে । __ তোমার নিকুগ্জদা এই জঙ্গলে কী করেন হে? তপন বিকৃত মুখে বললে, ব্যবসা! ! --এই বনের ভেতরে কিসের ব্যবস! ? কার সঙ্গেই বা ব্যবসা ? বাঘের সঙ্গে নাকি ?_-এবার আমার মনে একট! কুট সন্দেহ উকি দিতে লাগল £ আমরা তার দোকানের মাল হতে বাচ্ছি নাতো? - ফাজলামি ভালো! লাগছে না স্থকুমার। ভীষণ জ্বালা করছে পায়ে। তোমার নিকুঞ্জদা যদি বাঘের কাছ্ধে আমাদের বিক্রি করেন তা হলেষে আরো খারাপ লাগবে। ২৪ ভপন-চাবিত - আঃ থামো না!তপনের গলার আওয়াজেও এবার অস্বস্তি ফুটে বেরুল। মনে হল, সন্দেহটা যে তারও না জেগেছে এমন নয়। বললুম, ফিরে গেলে কেমন হয় ? --ফিরব কেন? ওই তো দেখা যাচ্ছে। তাই বটে। খানিক দূরে গোটা কয়েক টিনের চাল। চোখে পড়ল। আর টিনের চালা ষখন__-তখন দোকানে বাঘ ছাড়া অন্য খদ্দেরও থাকতে পারে। বেশ ক্ষিদেও পাচ্ছিল, একটু তাড়াতাড়িই প1 চালালুম ছুজনে। বনটা খানিক পরিফার হয়ে এসেছে । সামনেই হাঁত সাতেক চওড়া একট। পাহাড়ী নালা । মুড়ির ওপর. দিয়ে তিরতির করে নীল্চে জল চলেছে । তপন বললে, এ দেশে এগুলোকে জম্পই বলে। _-জম্পই ? এর ভেতরে ঝম্প দ্রিতে হয় বোধ করি? _-না না, ঝম্প দিতে হবে কেন? এক হাটু জলও হবে ন|। এই দ্যাখো না জুতো হাতে নিয়ে তপন নামল, আমিও নামলুম। তিন চার পা এগিয়েই এক প্রচণ্ড লাফ তপনের। -__উ গেছি-গেছি । বিছুটিতে জল লেগে__ বলেই জলের মধ্যে এক অপরূপ ভৈরব নৃত্য ! বেশীক্ষণ নয়, একটু পরেই পিছল নুড়িতে পদস্থলন। শুধু ঝপাত করে নিজেই যে পড়ল ত। নয়- পড়বার আগে আমাকেও জাপটে ধরল--নিয়েই পড়ল! ম্পই থেকে ঝম্পই দিয়ে ছুজনে যখন উঠে এলুম, তখনকার কথা না বলাই ভালো । তপন খোৌড়াচ্ছে এবং ছিগুণ বেগে পা চুলকোচ্ছে । চোট আমারও একটু লেগেছিল, তাঁর চাইতেও নিদারুণ মনোব্যথায় ভাবছিলুম শখের নতুন জুতে! জোড়া আমার গেল ! একাট যনোরম 'দবস * ই& চারদিকে নানারকম অচিন পাখি ডাকছিল তখন। কিন্ত তপনকে বিশেষ উৎসাহিত মনে হলো না। | নিকু্জদা বাংলোয় থাকেন না-_থাকেন হুখানি টিনের ঘর নিয়ে। " আর ব্যবসাটাও বোঝা গেল এইবারে । সাইনবোর্ডে পরিক্ষার বাংলায় লেখা £ লাইসেন্সপ্রাপ্ত গাজার দোকান ! ভেগার শ্রীনিকুর্জ- বিহারী রায়। বললুম, এদিককার বাঘের! বুঝি গাঁজা খায় ? তপন এবার খিচিয়ে উঠল £ বাঘে গাঁজা খাবে কেন? দূরে দূরে বস্তি দেখছ না? ওরাই কেনে । --অঃ! কিন্তু কুক্ষণেই বেরিয়ে পড়া গিয়েছিল । দোকানে নিকুঞ্জদাকে পাওয়া গেল না। একমুখ হেসে তার পুরোনো চাকর রামজী অভ্যর্থনা করল তপনকে । _খোবোর না দিয়ে কেন আসিয়েসেন? বাবু তো সবেরে গেলো ময়নাগুড়ির হাট, ফিরতে সাঝ হোবে। _সাঝ হবে কিরে? বিকেলে আমরা চলে যাব যে! কাল অফিস। ব্রামজী বললে, হা, সাঝ হোবে। তো বৈঠেন। চা-পানি করিয়ে দিই, খানা পাকাই । নিকুঞ্জদার ঘরের চাবি রামজীর কাছেই-ছিল, খুলে বসতে দিলে । নীচু টিনের ঘর, ময়লা ইজিচেয়ার একখানা, একটা ক্যাম্প খাট, লষ্টন। গোটা ছই-তিন ট্রাঙ্ক আর স্থুটকেস, খাতাপত্র, পঞ্জিকা, কয়েকটা মালিক পল্্র, এক কোণে লম্বা! একটা গাদা বন্দুক । ভিজে জামা কাপড় ছেড়ে নিকুঞ্জদার ছটো ময়ল। লুঙ্গি পরে বসলু্ ছজনে। আমি ইজিচেয়ারে, তপন ক্যাম্প খাটে । বললুম, পরিবেশটি ভারী মনোরম-_কী বলো ? খ্ঙ তপন-চারত হু [--তপন হঠাৎ তড়াক করে নেমে পড়ল £ ইঠ পা-টা আবার চুলকে উঠল। যাই-ান্নাঘর থেকে একটু মুন-তেল লাগিয়ে আসি। তপন বেরিয়ে গেল, আমি পঞ্জিকাটি টেনে নিয়ে অতি বৃহৎ লাল মূলা আর ড্রামহেড বাঁধাকপির (জলদি ) সচিত্র বিজ্ঞাপন পড়তে, লাগলুম। একটু পরেই রামজী ছ কাপ চা আর খান চারেক নেতিষে পড়া বিস্কুট এনে হাজির করল । বললে, আভি খানা পাকিয়ে দিচ্ছি । পায়ের পরিচর্ধা করে তপন ফিরে এল । বললে, কী খাওয়াবি বল তো? _ডাল হোবে, ভাত হোবে, আলুর চোখ! হোবে ! আযা! দেড় ঘণ্টা বাস জানি করে-_ছু মাইল অঙ্গল ভেঙে _-আছাড় খেয়ে, ভাত-ডাল-আলুর তরকারি ! তপন বললে, দূর ! মুরগী রান্না কর। মুরগী আভি মিলবে না । বিকালমে লিয়ে আসব । - বিকেল পর্যস্ত এই ধ্যাধ্যেড়ে জঙ্গলে পড়ে থাকতে বয়ে গেছে !_-বিকট মুখে অকৃপণ স্বীকারোক্তি করল তপন £ এই তো! বন্দুক রয়েছে । বনমুরগী মেরে নিয়ে আয় ! রামজী হাসল £ আরে, উ বহুত ঝঞ্ধাট। তামাম দিনমান ঢু ডলে এক আধঠো মিলতে পারে । জঙ্গলমে ঘুমতে হোবে। তপন প্রায় চিৎকার করে উঠল। _-তুই একটা রাবিশ ! চারদিকে এত জক্ষল--বনমুরগী মিলবে না? আলবৎ মিলবে ! চল স্থকুমার, চা খেয়েই আমরা বেরোচ্ছি । মুরগী না খেয়ে এখান থেকে ফিরব না । উৎসাহ দিয়ে বললুম, ঠিক । একেই বলে পৌরুষ ! সেই বিরাট গাদা বন্দুক পুরৈ নিয়ে শিকারে বেরুনো গেল। গায়ে গেঞ্জি, পরনে ময়লা লুঙ্গি, পায়ে সপনপে ভিজে জুতো -. একটি মনেরম দিবস ২৭ আদর্শ শিকারীর চেহারা । শ্যামলতা আর ঘাসবন ঠেলে ছোট ছোট বস্তি পাশে রেখে মুরগী শিকারে চলেছি । অচিন পাখির ডাক কানে এল, ছু চারটে নেড়ী কুকুর চোখে পড়ল, নালার পাশ থেকে বক উড়ে গেল-_কিস্তু কোথায় বনমুরগী ! একটা ঘুঘু পর্ধস্ত দেখা যাচ্ছে না কোথাও । ঘণ্টাখানেক হ্াটাহাটি করে বললুম, ব্রাদার, এবার ফেরে । বেলা বারোটা বাজে--কপালে ডাল আর আলুর চোখাই নাচছে আজ । বনমুরগী আর একবার হবে। ফস করে তপন একবার পী-টা চুলকে নিলে । তারপর কঠিন মুখে বললে, কভি নেহি। মুরগী মেরে তবে ফিরব । _বেশ তো, প্রতিজ্ঞা পালন কালকেও করা যেতে পারে। গোটা চারেক টাকা আমায় দিয়ো-_বাজার থেকে বড় দেখে একটা কিনে এনে দেব। তারপর নির্মমভাবে তৃমি সেটাকে-_ _স্টপ!--তপন আমার ঘাড়ে একটা! থাবড়া দিলে ঃ লুক! তাই তো-_যুরগীই বটে। মানে, বেশ বড়ো সাইজের মোরগ একটি । জঙ্গলের ধারে খুঁটে খু'টে খাচ্ছে । তপন পাক! শিকারীর মতো হাঁটু গেড়ে ৰসে পড়ল। চোখ বুজে বন্দুক বাগিয়ে__ওয়ান, ট-ী-_খ্রাম্‌! সঙ্গে সঙ্গে কাধে কুঁদোর গুতো খেয়ে তপনও খাম! ভাগ্যিস মাটিতে বসে পড়েছিল--নইলে একটা দুর্ঘটনা ঘটে ষেত। তপনকে টেনে তুললুম ৷ - এই গাদা বন্দুকগুলো থার্ড ক্লাস! এমন ধাক্কা মারে ! একটু হলেই কলার বোন ভেঙে ষেত। _তা হোক-_তা হোক । বড় শিকারীরাও কুঁদোর ঘাযে পড়ে যায়। জিম করবেটও উল্টে পড়েছিলেন ম্যান ইটার্স অফ কুমায়ুন পড়ে দেখো । -খধুজোর কুমায়ুন ! মোরগটার কী হল? ২৮ তপন-চরিতি আমি বললুম, অব্যর্থ লক্ষ্যভেদ। পড়েছে। _ পড়েছে? লা-লা-লা।-_-তপন নেচে উঠল, দৌড়ে গিয়ে কুড়িয়ে আনল রক্তাক্ত মোরগটাকে। -ইঈস্‌, পাক্কা হু সের! খাওয়াটা কেমন হবে বল দিকি? ব্যাপারটা এইখানে শেষ হলে বেশ মনোরম হতে পারত । কিন্ত উপসংহার আছে। মোরগ নিয়ে যথাস্থানে পেঁছুতে না পৌঁছুতে দশ পনেরোটি বন্তির লোক এসে হাজির হলো! । প্রচণ্ড চিৎকার তাদের গলায়-_ এবং কারে! কারে! হাতে প্রকাণ্ড লাঠি ! বনমোরগ নয়-_পোষা মোরগ। অনেক মুরগীর গোষ্ঠীপতি সে--অনেক নাবালক মোরগের সে পিতা এবং বু অনাগত ডিমের ভাবী আষ্টা। এ হেন মোরগকে যে মেরেছে, তার সঙ্গে ওরা একটা বোঝাপড়া করে নিতে চায়। বোঝাপড়া হলো । কুড়ি টাক দাবি করেছিল, জোড় হাতে রামজী দশ টাকায় রাজী করাল। আর দশটা টাকা দিতে হলো তপনকেই। অথচ শহরে ওটা টাকা চারেকেই কিনতে পাওয়। যায়। তবু বনে চরে বেড়ায়--অতএব বনমুরগী । আর এমন প্রাকৃতিক পরিবেশে, নীল পাহাড়ের কোলে, ঝিরিঝিরি ঝরনার গানের মধ্যে যাকে শিকার করা হলো, তার দাম একটু বেশীই তো দিতে হবে । অন্তত তপনকে সেইটেই আমি বোঝাতে চেয়েছিলুম । বুঝল কিন! জানি না, কিন্তু মোরগের মাংসে ওর এত অরুচি এর আগে আমি কখনো দেখিনি। সন্ধ্যেবেলা বাড়ির সামনে গিয়ে যেই ডাক দিয়েছি, অমনি একেবারে লাফাতে লাফাতে বেরিয়ে এল তপন । --এই যে এসে গেছ তা হলে! যাক। আমার কেমন ভ্যাবাচ্যাকা লেগে গেল। এসে তো গেছিই। কিন্তু সেজন্যে অমনভাবে নাচবার কারণটা তো বুঝতে পারছি না। তৃষি তো আমায় নেমস্তন্নও করোনি । তা ছাড়া-_. | | তপনের মুখের দিকে তাকিয়ে এবার আমার সন্দেহ হলো! £ আর মুখে হলদে হলদে ও-সব তুমি মেখেছই বা কী? তোমার গায়ে- হলুদ নাকি হে? _আ্যা-লেগে গ্রেছে বুঝি 1--তপন ছ' হাতে মুছতে চেষ্টা করল এবং তার ফলে সেই হলুদ রঙের বাপারটা ঠিক চলে গেল কিন! বুঝত্তে পারলুষ নাঃ কিন্তু যাবার আগে ওকে বেশ করে রাঙিয়ে দিয়ে গেল। মানে বেশ নতুন রকমের একটা চেহারা হলো তপনের। _ওগুলো কি হে? মুখে মাথছই বা কেন? _মাখছি কে বললে তোমায় 1--তপন বিরক্ত হলে! £ ধনে বাটা ছিরে বাটা-_হলুদ বাটা এগুলো৷ কেউ মুখে মাথে ? আমি চমকে গেলুম £ মাখছিলে না? তবে খাচ্ছিলে বুঝি? কিন্ত ধনে-দ্রিরে বাটা! কি কখনো! কেউ খায়? এর পরে তুমি তো! দেখছি শিল-নোড়া' অবধি খেতে শুরু করে দেবে। তপন চটে গেল £ মিছেমিছি বকে মরছ কেন শুনি? ভেতরে আসবে না রাস্তায় ঈ্লাড়িয়ে থাকবে? তপনের সচিত্র নিলি রর একটা গভীর ব্যাপার ঘটতে যাচ্ছে। তেরা, ভেতরেই পদার্পণ কর। গেল। : গরমের ছুটিতে তপনের মা বাবা ভাইবোন সবাই পুরীতে বন্ধুকে না রাখলে ৩১ বেড়াতে চলে গেছেন। ব্যাঙ্কের চাকরিতে তপন আই পৃষ্ঠে বাঁধা _-তার বেরুবার জো নেই। এই ফাকে মাঝে মাঝে ওদের বৈঠকখানায় আমি আড্ডা দিই আর তপনের বাবার ইজিচেয়ারে শুয়ে সেই ভদ্রলোকের শখের গল্ভগড়ায় ভালো বিষ্ুপুরী তামাক খেয়ে থাকি । আজকেও জুত করে চেয়ারটায় বসতে যাচ্ছি এবং তামাকের জন্যে তপনের চাকর ঝড়ুকে একট! ডাক দেব ভাবছি, ঠিক তখনই মোট! গলায় তপন বঙ্গলে, উন, ওখানে নয় ! তবে কোথায়? -প্রানাঘরে | আমার সন্দেহ অ।রো গভীর হলো । --তার মানে? আমাকেও ধনে বাট। খাওয়াতে চাও নাকি? না ভাই--আামার ওসব অভ্যেস নেই । _-আঃ, এ তো! ভারী জ্বালা হলে! । কে তোমায় ধনে বাটা খাওয়াতে চায় শুনি ?-_তপনের মশলামাখা লেবুর আচারের মতো! মুখে খানিকটা মোহিনী হাসি মিটমিট করে উঠল £ রান্না চাখাব-_ রান্না ! নিজেই রাধহ্ছি কিন! ! প্রথমটায় প্রাণ উৎসাহে নেচে উঠেছিল, শেষ কথাটায় একটু ' দ্রমেই গেলুম । _তুমি রাধছ ? জানো নাকি রাধতে ? _-ও আর জানাজানি কি, রাধলেই হলো । এসো না_চাখবে একটু । মাংস আর পায়েসটা! করে ফেলেছি, এখন মাছের কালিয়া আর ভাতট! হলেই হয়ে যায়। শর্ট বাট্‌ সার্প কোর্স। এসো-_ এসো- | রান্নাঘরে এসে দেখি চারদিক একাকার । মেজেটা নান! রঙের জলে জলময়। তার মধ্যে রাশি রাশি পেঁয়াজের খোসা, মাছের আাশ--আধর্বাটা মশলার কদাকার ধ্বংসাবশেষ । এক ধারে একটা স্টোভের ওপর এলুমিনিয়মের হাঁড়িতে নৌ মৌ আওয়াজ হচ্ছে। শা ৩২ ভপন-ঢারিত -এসব কী ব্যাপার হে? এত সমারোহ করে রাধছ কেন ? তোমার ঝড়টাই বা গেল. কোথায়? _ঝড়ুর কথা আর বোলো না--তপনের মুখে বেদনায় ছায়া পড়ল: প্রত্যেক ছ মাস পরে ওদের চাচা মারা যায়। কোথা থেকে যে এত চাচা পায় ভগৰানই জানেন । ভাই আজব সকালে দেশে পালিয়েছে । আর আমি- রান্নাঘরের সেই ভ্বলের ওপর তপন একটা মোনা পেতে বসল -_ আমাকেও একটা দিলে। আমি সেই মোড়ার দ্বীপে উবু হয়ে বসলুম, তারপরে আবার কৌতৃহপ্পী জিজ্ঞাসা নিক্ষেপ করলুম। চাকর দেশে গেছে বলেই কি এত ঘটা করে মাংস পায়েস র'ধতে শ্রক্ধ করেছ ? আবার সেইরকম একট! ৰন-মোরগ শিকার করেছ নাকি ? মানে সেই ষে বন্দুক দিয়ে কার পোষ! মোরগ মেরে কুড়ি টাকা গচ্চা দিয়েছিলে ? _ুত্তোর তোমার" বনমোরগ ।--তপন চটে বললে, আমায় কিছু বলতে দেবে ম্ুক্মার ! নাকি নিজ্বেই সমানে বকর-বকর করে যাবে? --আচ্ছা- আচ্ছা-বলো শুনছি। তপন এক মনে কয়েকটা মাছের টুকরোতে হলুদ-টলুদ কী সব মাখাতে মাখাতে বলে চলল, মানে কলকাতা থেকে আমাদের এক বড়কর্তা গঞজ্জাননবাবু ইনম্পেক্শনে এসেছেন। ওর একটা ভালো রিপোট পেশ্সে আমার প্রমোশন হয়ে ষায়। খুব খাইয়ে লোক-_ মাংদ আর পায়েসট! দারুণ ভালোবাসেন। ভাবলগুম এই মওকায় নেমন্তুয় করে খাইয়ে দিই।' তাই হাত-টাত কচলে বললুম, ম্যার, ক্কাল সন্ধে আমার ওখানে যদি একবার--! শুনে বললেন, “তা বেশ, তা বেশ। তবে আমি বেশি জিনিস পছন্দ করিলে, পানে" বল্ধূফে না রাখিলে ৩৩ শর্ট আর -শার্প কোর্স হলেই চলে। একটু মাংস-পায়েস_-আর মাছের ঝোল-ভাত, বাস! আমি তো নেমন্তত্ন করে এলুম- ইদিকে বড় হতচ্ছাড়া দিন বুঝে হাওয়া হয়ে গেল। আর নেমস্তন্গও তো! ফিরিয়ে নিতে পারি না--তাই-_ আমি মেঝেতে একটু শুকনো জায়গা দেখে পা নামাতে যাচ্ছিলুম, কিন্তু খানিকটা মাছ ধোয়া জল সেদিকে তেড়ে আসছে দেখে চট করে আবার মোড়াতেই উবু হয়ে বসলুম । বেশ ব্যালান্দ্‌ করে বসতে হচ্ছিল, কারণ উল্টে পড্ড়লে আমাকেই মস্তাবতার হয়ে মেঝের সেই নানা রঙের ঝোলে সাঁতার দিতে হবে ! বলপুুম, পায়েস আর মাংসটা তো হয়েই গেছে বলছ- _কিস্ত-- আমার নাকটা হঠাৎ চোখা হয়ে উঠল; কিন্তু হাড়িতে একটা কিছু পোড়াচ্ছ বসে বোধ হচ্ছে। ওটাও কি কোনো খাস্তজ্রব্য নাকি? _আ্যা-পোড়াচ্ছি মানে? ভাত হচ্ছে যে--তপন পা পিছলে সড়াক্‌ করে পড়তে পড়তে হাড়ির দিকে এগোল, তারপর চদার টেনে নামালো । _ইস্--ইস্‌ আঙলে ফোশকা পড়ে গেল যে! ওফ! ওয়াঃ ! | আমি বললুম, বার্ল-কার্নল থাকে তো-_ _চুলোয় যাক বার্ল--তপন একটা খুস্তি দিয়ে ঠনাৎ করে হাড়ির ঢাকনাটা নীচে ফেলে দিলে । আর তার ভেতর থেকে - ঘদ ধোয়ার সঙ্গে পাকিয়ে উঠতে লাগল পোড়া ভাতের গন্ধ । --এঠ ভাতট। একেবারে লাল হয়ে গেছে--তপন হাহাকার করে উঠল ঃ ভালো গোবিন্দ্ভোগ চাল এনেছিলুম-_তার বারোটা বেজে গেগ। ইঃ ইঃ_-এখন খেতে দিই কি গন্কাননবাবৃকে ? আমি জিক্াফের মতো. গলা বাড়িয়ে একবার ভাভটা প্থযেজ করলুর্ন। . মাথায় বুদ্ধি এসে গেল একটা । ঙ ৩৪ তপন-চাঁরত দিব্যি লালটুকট্রকে দেখাচ্ছে । ওটাকে পোলাও বানালে হয় না? - পোলাও !__তপন বিচলিত হল £ তা কী করে হয়? পোড়৷ ভাত কি কখনো পোলাও হতে পারে ? -কেন পারে না ?_আমি ওকে উৎসাহ দিতে লাগলুম £ রট। তো হয়েই রয়েছে--এখন বেশ করে খানিকটা ঘি ঢেলে দাও । লাল ভাতে ঘি মাখানো থাকলে তাকেই তো! পোলাও বলে ! তপন ফোস্কাপড়া হুটো আঙুল একবার মাথার চুলে ঘষে নিলে। তারপর চিস্তিত হয়ে বললে, ঠিক তাকেই বলে কি? মানে-_পেস্তাঁবাদাম-কিস্মিস- _-তাও দিয়ে দাও না গোটাকয়েক | _পাব কোথায় শুনি ?--তপন ব্যাজার হয়ে উঠল £ আজ রোববার--বাজার বন্ধ না? তবে--তপন একটু উৎসাহিত হয়ে উঠল £ আচ্ছা, আঙুর শুকিয়েই তো কিসমিস্‌ হয়না হে? আমি ও ব্যাপারে খুব নিশ্চিন্ত নই । তবু বললুম, সেইরকমই তো শুনেছি । -আছ্ধ বিকেলে সম্তায় এক পো আঙুর কিনেছিলুম । একটু টক আছে--তা--ওরই গোট।কয়েক দিয়ে দিই কী বলো ? _্দাও-দাঁও। ঘিয়ে ভাজ! হলেই আঙ্র কিস্মিস্‌ হয়ে যাবে টক হুলে বোধ হয় বিশেষ ক্ষতি হবে না-_কোনো কোনো কিন্মিস্‌ তো৷ একটু টক হয়েই থাকে | তা কে। হয়ই ।--তপন আমার সঙ্গে একমত হল, তারপর বেশ খুশি হয়ে বগলে, বৃদ্ধিট! কিন্ত ভালোই দিয়েছ সুকুমার । এই বল্সেই তে। সময়-অসয়য়ে বন্ধুর দরকার হয়। তপন উঠে গিয়ে 'কোথা থেকে .এক থাবা! আঙুর নিয়ে এল । ভ্ঞারপর সেরধানেক ঘি আর সই আঙ্রগুলো: ভাতের মধ্যে ঢেলে রি রি রা গন সিন আরি সুষ্ঠ বম্ধাকে না রাখিলে ৩৫ দৃষ্টিতে ওর সেই কর্মতৎপরতা লক্ষ্য করতে লাগলুম। খানিকটা নাড়ানাড়ি করে তপন নাকটা কুঁচকে বললে, গন্ধটা! কী বলে ইয়ে-_ তেমন ভালো বোধ হচ্ছে না কিন্তু ! আমি বললুম, গন্ধে কী আসে যায় হে! স্বাদেই মেরে দেবে। _-ত1 মেরে দেবে বটে । কিন্তু খানিকটা! ভাত-_মানে পোলাও _হাড়ির তলায় শক্ত হয়ে আটকে আছে যে! উঠছে না! বললুম, উঠিয়ো নাঁ_থাকুক। হাড়িখানেক তো হয়েছে দেখছি । ওপরে ঝা আছে তাই তো! চারজনে খেয়েও শেষ করতে পারুবে না। _্থ, চালট! একটু বেশি পড়ে গেছে বোধ হচ্ছে-_তপন মাথ! নাড়ল £ তাইতেই পুড়ে গেল খুব সম্ভব। যাক, তবু এই ম্থযোগে পোলাও রান্নাটাও শিখে ফেলা গেল-_কী বলো ? __নির্ধাত। জীবনে সুযোগ তো! এইভাবেই আসে-_এম্নি আযকৃসিভেণ্ট . থেকেই বড় বড় বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার হয়। কিন্তু -_-একটা অত্যন্ত জরুরী কথ! আমার মনে পড়ে গেল ঃ আমাকে ষে মাংস, আর পায়েস চাখাবে বলেছিলে-__-তার কী হলে! ? পোলাও রান্না শিখে ফেলায় তপনকে বেশ পুলকিত দেখা গেল। এক গাল লেবুর আচার বিনিন্দিত হাসি হেলে বললে, হচ্ছে হচ্ছে। চাখাবে! বই কি। আর পোলাওটার পরিমাণ যা দেখছি তাতে খাইয়েও দিতে পারব বোধ হয়। কিস্ত একটু দাড়াও _ মাছের ঝোলটাকে চাপিয়ে দিই আগে। তা হলেই আমার খেলা খতম--একদম ছুটি! দেখছ না, তখন থেকে খামোকা স্টোভট! পুড়ে যাচ্ছে? . তখন একটা কড়াই এনে স্টোভে বসিয়ে দিলে। প্রাণ খুলে সেল ঢাপল তাতে । ঠিক কতটা চালল বলতে পারব নাস সেরের কাছাকাছি বলে মনে হলো । ভারপর যাছ দিতে গিন্েই . খেমে গেল--এই যা. ট্রিক মনে ৩৬ ভপন-চারন্চ পড়েছে । ওঠ একটু হলেই ভূলে গিয়েছিলুম ।_-বলেই টপ করে পাশের কুলুক্ষি থেকে কী একটা টেনে এনে মুখে পরে নিলে। আর আমি আতকে উঠে, মোড়া থেকে উল্টে পড়তে পড়তে সামলে গেলুম । শএকি কাণ্ড জ্যা। কাগজের লম্বা নাক, বড় বড় দাত আর মোটা সৌফওলা এক ভয়াবহ মুখোশ । তার ভেতর থেকে হা-হ্যা-হা! করে একটা বিকট হাসি ছাড়ল তপন। | _ হঠাৎ ও-রকম মুখোশ পরে লোককে চমকে দেবার মানে কী- শুনি 1 আমার রাগ হয়ে গেল । - হা-হযা-হা- এবার তপনের মুখোশখোলা আচারমার্কা হাসি আমার ব্রেনওয়েভ । মাছ কিনে আনছি, দেখি রাস্তার ধারে বিক্রি করছে এগুলো । . মনে পড়ল, মা কড়াইতে মাছ দিলেই দেখেছি তেলফেল ছিটকে ফিট.কে মুখে আসে ।. তাই এটাকে মাস্ক 'করে --মানে তেল-মাস্ক করে মাছ ভাজব। দেখে নাও- বলে আবার সেই বিকট মুখোশটা পরে নিলে, আর সমস্ত মাছগুলো ঢেলে দিলে তেলের তেতরে। তারপর তক্ষুনি সেই খুস্তিটা নিয়ে ঘটর ঘটর করে মাছ নাড়তে লাগল। আমি বললুম, আহা-হাআজ্তে নাড়ো, যাচ্ছ ভেঙে যাবে ঘষে | তপন মুখোশ-পরা ভয়ঙ্কর পাকানো চোখে আমার দিকে তাকালো । গোঁ গোঁ করে বললে, গেছেই। মানে তেলে পড়তেই কেমন লাড্ডুর মতে] পাকিয়ে গেল। তা হলে? মুখোশ খুলে তপন বললে ঝোল হবে না বোধ হচ্ছে। এগুলো দিয়ে এখন কী করা যায় বলো তো? চপ করে দেখব? "সেও তো ভাবতে হবে ।--আষি বললুষ আর ভাক্াটাই বন্ধুকে না রাখলে ৩৭ সবচেয়ে বিপজ্জনক । ওটা টক করা যায় না? মানে--মাছের চাটনি? ধরো খানিকটা তেতুল গুলে দিলে--ভালোই হবে বোধ হয়? __না, মাছের চাটনির দরকার নেই।--তপন এবার একটু গরস্তীর £ তেতুল আমি একেবারে পছন্দ করি না । ওটীকে ফ্রাই বলে য্ধি চালাই-__কেমন হয় ? কিন্তু ফ্রাই কি ঠিক ওইরকম হয়ে থাকে? মানে, সেটা কি খানিকটা কাটলেটের মতো নয়?--আমার একটু সন্দেহ হলে! । তপন বললে, তা বটে। কিন্ত যদি বলি এট৷ মেক্সিকো ফ্রাই ? মানে গজ্জধাননবাবু নিশ্চয়ই কখনো মেক্সিকোতে যাননি | আহি বললুম, স্পুটনিক ফ্রাই বললে আরো চমকে দেওয়া যাত। ভপন আপত্তি করল £ নামকে দিতে চাই না, চাকরিতে প্রমোশন পেতে চাই । ওটাকে বরং মেক্সিকো! ফাই-ই বজি। _বলো। “গোলাপ যে নামে ভাঁকো, সুগন্ধ বিতরে ৷ গঞ্কাননকে কাদা! করতে পারঙ্গেই হলো । কিস্তু--আবার সেই জরুরী প্রশ্থটা! আমার মনে পড়ে গেল £ কিস্তু তোমার সেই ছটো জ্যাচিভমেন্ট_সেই পায়েস আর মাংস যে আমাকে চাখাবে বলেছিলে, তার কী হলো ? -হ্যাহ্যা হচ্ছে ।-_মেক্সিকো ফ্রাইকে আরো খানিকটা ঘট ঘট শব্দে নাড়ানাড়ি করে ভপন স্টৌোভ নেবালো। বলতে লাগল, মাছের. ঝোল কর! গেল না বটে, কিন্ত পোলা ওটা! তে। বাড়তি হলে] । আর কী বলে__ত। ফ্রাইটাও বেশ নতুন ধরনের দাড়িয়েছে। ভালো কথা, পোলাওতে তো! কোনো মশঙ দেওয়া হলো! না । একটুখানি ধনে বঁটা আছে, দিয়ে দিই ? গাল সারা পোলাওকে ধনী-- ৩৮ ভপন-চাক্ষত মানে রিচ করাই তো দস্তুর | বেশি বলতে হলো না। তৎক্ষণাৎ তপন ওটাকে রিচ করে ফেলল । --এইবার চাখো--একটা রাইস প্লেট নিয়ে ভপন আমার জন্যে সব পাজাতে আরগ্ত করলে । আমি একটু অস্বস্তি বোধ করলুম ; বঙ্ছিলুম কি ফ্রাই থাক। ওটা বরং না-ই চাখলুম। আর পোলাওটাও-_ _বাঠ সে কি হয় 1--তপন ব্যথিত হলো £ ভোমার আইভিয়- তেই পোলাও করল্গুম-_একটু না চাখলে চলে ? নাও, ধরো ধরো । এই যে--চামচে দিচ্ছি-_ কী আর করা নিতেই হলো! আমাকে । যেই একটু পোলাও জিভে ঠেকিয়েছি_-সঙ্গে সঙ্গে তার উৎকট স্বাদে গন্ধে নাকমুখ যেন বুজে উঠতে চাইল। প্রাণ বাঁচাবার জ্রচ্যে গাঢ় লাল রঙের ঝোল থেকে একটা মাংসের টুকরোকে তৃলতে গেছি-_-সেটা চামচের চাপে সোজা! বুলেটের মতো প্লেট থেকে ছিটকে বেরুল। হাজার খণ্ডে বিভক্ত এবং ঝোলায়িত হয়েও সে আদিম ও অদমিত-_ একেবারে পাঠার গোঁ নিয়ে ছুটে গেল-_ব্যা করে ডেকেও গেল কিনা কেছ্জানে। এই.সহত্র-খপ্ডিত অথচ বনুরূপে জীবন্ত পাঠাকে কিছুতেই কায়দা! কর! যাবে না জেনে আমি একটুখানি ঝোল মুখে তুলে নিলুম। আর তখুনি চীৎকার ছাড়তে হলো । তারত্বরে ময়-_একেবারে কাছি ব্বরে। - আগুন--আগুন ! মুখ জলে গেল__আগুন-- ধাবন্ত গীঠা দেখেও তপন বিচলিত হয়নি, এবার ঘাবড়েই গেল একটুখানি । রি | -ঝাল হয়ে গেছে বুবি? আমি ভাবলুষ গজ$ননবাধু চিটাগাঙের লোক্‌__তাই একটু বেশি করে লক্কাাট।--. বন্যকে না রাখলে | ৩১৯ _রেখে দাও চিটাগাঙ। এই ঝোল খেলে গজানন একেবারে গাঙসই হয়ে যাবে। উ:--আগুন-_-দাবানল--বাড়ব বন্ি-৮ ফায়ার ব্রিগেড- না-না--পায়েস--পায়েস__ হাহাহা দিচ্ছি__ বিছাংবেগে একটা বাটিতে করে প্রায় তরল শাদারঙের কী খানিকটা দিলে আমায়। এবং তাতে একটি-_মাত্র একটি চুমুক দেবার পরেই-_ তড়াক করে আমি বাইরে বেরিয়ে পড়লুম__একেবারে নালাটার ধারে। পেটের বত্রিশ নাড়ী এক সঙ্গে চগ্ডালিকা'র কোরাস গাইতে লাগল £ “পাক দে-_-পাক দে__-পাক দে-এ-এ ৮ এবং গলা দিয়ে অন্প্রাশনের নয়, তারও আগের-_মানে পূর্বজন্মের একম্সাধ দানাও কিছু ষদি থাকে, সব 'হা-রে-রে-রে' করে বেরিয়ে আসতে লাগল ! আর তপন টাদি চুলকোতে চুলকোতে বলে চলল : ই-হি-হি, আমারই ভুল হয়ে গেছে। মাছটাছ কুটে সাবান দিয়ে হাতটা কখন পায়েসের গামলাতেই ধুয়ে-ফেলেছি, টেরও পাইনি ! আমি যখধর্ন খানিকটা সামলে নিয়েছি, তখন তপন বসে পড়েছে মাথায় হাত দিয়ে। ওর লেবুর আচার মার্কা মুখটা লঙ্কার আচারের মতো শীর্ণ এবং করুণ । একবার বিড়বিড করে বললে, চির শি রন্রি রর যাবে না একটুখানি ! আমি-জবাব দিলুম £ ক্ষেপে গিয়ে তোমায় কামক্কে দিতে পারেন গজানন। | "আর মাংসটা ? -শিং তুলে গুকে গুতিয়ে দেবে। ৪8৩ তপন-চাঁরত --তা হলে পায়েস? না-না-ওতে আবার মাছ কেটে, সাবান দিয়ে হাত ধুয়েছি--ও চলবে না। কিন্ত একটুখানি ফ্রাই ? ট্রাই করলেই মারা যাবেন। এবং তাতে খুব সম্ভব তোমার ফাসি হবে। তপন এবার ডুকরে উঠল । _-কী, হবে ভাই? প্রমোশন তো গেলই, কিন্ত লোকট! যে স্টেশনের কাছের ভাকবাংলে৷ থেকে পুরো এক মাইল স্বেঁটে খেতে আসবে--তার কী করি? আর নস্টা প্রায় বাজে-_-আসতেও তো দেরি নেই । অগত্যা নিভ্বেকে বললুম, উত্ভিষ্ঠত: জাগ্রতঃ। যেমন পায়েসই খাওয়াক-_বন্ধু তো! এবং দুঃসময়ে বন্ধুকে বন্ধু না রাখিলে কে রাখিবে ! বললুষ, তোমায় কিছু ভাবতে হবে না-_চুপচাপ বসে থাকো।। নিজের রান্নাও খেতে পারো এক আধটুখানি। আমি তোমার গজাননকে দেখছি । কেবল তোমার রান্নাঘর থেকে একট। দরকারী জিনিস আমায় নিতে হবে। তপনের বাড়ির সামনে একটা ছোট কম্পাউগু, গেটের ছু' ধারে গোটাচারেক বড় বড় আমগাছ। রাস্তার ইলেক্ট্রিক একটু দূরে _-বেশ আলো!-আধারি তৈরী হয়েছে খানিকটা । ূ আমাকে মিনিট সাতেকের বেশি দেরি করতে হলো। না । বেশ স্ব গলায় গান শোনা যাচ্ছে £ “ধুয়া, নিদ্‌ নাহি আখিপাতে । অর্থাৎ গজাননবাবু আসছেন । নিদ তার থাকবার কথ! নয়__অচিরে একটি শর্ট আর শার্প কোর্সের সম্ভাবন। রয়েছে যখন! আমিও তৈরী হয়ে নিলুম। ' প্রথমে আমগাছের আড়াল থেকে বললুম : গাঁ-গা-্গা-_ গজানন চমকে থেমে বললেন, কে--কে ওখানে? এবারে সামনে বেরুতে হলো। সেই সুখোশটাকে--মানে বম্ধমকে না রাখিলে ৪১ তপনের সেই অয়েলমাস্বকে__ইলেক্ট্রকের আলো-আধারিতে বিকশিত ক'রে হালুম তপনের মতো! £ হাহাহা? এবং ভারতীয় নাচের ছন্দে খানিকটা! অগ্রসর হলুম গজাননের দিকে । গজানন আকাশের দিকে একটা! লাফ মারলেন, কেবল বললেন, ওরে £-1. তারপরে যে গতিতে-_যে রকম দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়ে ভিনি ছুটলেন, তাতে পরিক্ষার বোঝা! গেল £ এক মাইল দূরের ডাকবাংলো কেম, তিনশো মাইল দূরে কলকাতা পর্যন্ত না পৌছে তিনি আর থামছেশ না ! 'বন্ধুকে বন্ধু না রাখিলে কে রাখিবে ? আপনারাই বলুন। তপন, বললে, চলো, খামারে যাওয়। যাক । --খামারে? কেন ?--মামি ভয়ানক চমকে গেলুম £ আমি গোরু না ছাগল যে খামারে যাব? তোমার ইচ্ছে হয় তুমি যাও -_যত খুশী খড় আর কাচা ঘাস চিবুতে থাকে । তপন বিরক্ত হয়ে বললে, ভূমি একটি ব.ব--বোগাস! এই জন্যেই তো ভ্োমীর রাবিশ গল্পগুলো পত্রিকায় পাঠালেই ফেরত দেয়! খামারে ফি কেবল গোরু-ছাগল থাকে নাকি? ধান থাকে । --তবে কি আমাকে ধান খেতে যেতে বলছ? রিট আমি ধান.খেতে ভালে বাসি না। _-ক্ালিয়োনা বলছি সুকুমার। ধান খেতে কে বলেছে তোমায়? ওখানে আমাদের পুকুর আছে-_মাছ মারব। শুনে আমীর ছ কান খাড়া হলো । আজ মাসখানেক হলো! বাচার থেকে মাছ উধাও। শাকপাতা চিকুতে চিবুতে মনে হয় কোন্দিন হঠাৎ ব্যা করে ডেকে উঠব । বললুম, মাছ! প্রাগৈতিহাসিক যুগে ওই নামে একট প্রানী ছিল বলে শুনেছি । তাদের গায়ে নাকি জাশ ছিল, আর আশটে গন্ধ ছিল, আশ বষ্ি নামে একরকম অস্ত্র দিয়ে নাকি তাদের কাটা হতো, তাদের দিয়ে নাকি দ্বা-ঝোল নামে নানারকম সখ্য তৈরি করা যেত। সে প্রাণী'কি আর আছে ভাই? তারা তো কবে সেই ডোডো পাখির মতো লুপ্ত হয়ে গ্রেছে । তপন এক গাল হেঙ্গে। বালে, না ভাই, অত "মুষড়ে যেয়ে! না। এখনো তারা সম্পূর্ণ লগ হয়নি-__-আমাদের খামীরের পুকুরে ছচারটে আছে। ' যদি দেখতে এবং খেতে চা তা হলে আমার সঙ্গে-_ লাফিয়ে উঠে বললুম, এক্ষুনি ? ছানিন নারে, এক্ানি। মাংফলনিক্প ৪8৫ এই -পর্যস্ত হল উৎসাহ-পর্ব। তারপরে আমাকে আর ঠেকানো গেল না। তৎক্ষণাৎ ফেন আমি জ্াতিম্মর হয়ে উঠলুম, আমার চোখের সামনে ঝাল-ঝোল-কালিয়ার রূপ ধরে এক ন্বর্গায় শোভ1- যাত্রা শুরু হয়ে গেল এবং আমি তপনের সঙ্গে_ষাকে বলে ইরম্মদ বেগে", খামারের দিকে রওনা! হলুম । তপনের খামার দূরে নয়-_শহর থেকে মাইল তিনেকের মধোই। চারধারে ধানক্ষেত, মাঝখানে আম-কাটাপ-কলা-স্পুরির গাছ, একটা ছোট টিনের বাড়ি আর বাঁধানো ঘাটলার একটি পুকুর। পুকুরের এক ধারে ছটো৷ ধানের গোলা । আমরা সাইকেল থেকে নামতেই একদল: মুরগীর ছানা চিডি করে ছুটে পালালো, দড়ি বাঁধা একটা পাটকিলে রঙের রামস্ছাগল মিহি গলায় ডেকে অভ্যর্থনা করল আর কোদাল কাধে মাল-' কৌচা মারা একটি বেঁটে কালো লোক আমাদের দিকে এক গাল হেসে এগিয়ে এল ৷ ণঁ _ পেন্নাম হই ছোট বাবু । ত্নীন বললে, তা হও, আপত্তি নেই। আমি যে খবর গা্িরদির্রিরলিনও তো ? লোকটি বললে, এজ্জে। _ ছিপ, চার--সব রেডি আছে তো! ? _এজ্জে। --“চার ফেলে রেখেছ ? __ এজ তাও রেখেছি ।_-লোকটি আবার বিনীত হাসি হাসল কিস্তক- | _ কিন্তুক ?__তপন তুর কৌচকালো! £ কিন্তুক মানে কী? _এজ্জে বলছিলুম কি, মাছ ধরবেন সে তো ভালে! কথা কিন্তুক এ সময়টা মাছে খায় না. এমাছে খার শ্রী? তপন চটে গেল ; তবে কি উপোর করে, ৪9৬ তপন-চাঁরিত থাকে ? তোমার মতলব তো! ভালো বলে মনে হচ্ছে না রাধেশ্যাম। এই তো সেদিনও পঞ্চাশ টাকার পোনা ছাড়া হয়েছে। তুমিই সেগুলো সাবাড় করোনি তো? রাধেশ্যাম এক হাত লম্বা জিভ কাটল। -এজ্কঞে আমিকি বোয়াল মাছ যে পোনা ধরে খাব ?' কী যে বলেন! - বোয়াল ন! রাঘব বোয়াল সে ই জানো। মোদ্দা কথা, মাছ আমরা আজ ধরবই। তুমি ছিপ আর টোপ নিয়ে এসো, আমরা ঘাটে যাচ্ছি। মাঝারি সাইজের দিব্যি পুকুরটি। নীল জ্বল টলটল করছে। সুপুরি গাছের ছায়া কাপছে জলের ওপর। ছুজনে ঘাটে পিয়ে বসা গেল। তপন বেশ ভালুকের মতো তাকিয়ে রইল কিছুক্ষণ। বললে, বেশ জায়গাটা--কী বলো? চারদিকে কী মনোরম শ্ঠামলের শোভণ--আহা ! অগত্যা আমাকেও বলতে হুল £ আহা !_-তারপর একটু মাথা চুলকে বললুম, কিন্ত ব্যাপারটা কী জানো ভাই, একমাস ধরে খালি শ্যামল-_মানে শাক-সজী চেখে চেখে-_-ইয়ে শ্তামলের ওপর অরুচি ধরে গেছে। মানে এক আধটী মাছ-টাছ হলে-_ হবে, হবে, মাছও হবে'। ঘাবড়াচ্ছ কেন? -_ঘাবড়াতে চাইনি ভাই, কিন্তু তোমার রাধেগ্তাম যে বলছিল এ সময় নাকি মাছে খায় না? স্মাছে খায় না মানে? মাছের বাব! ০055 উত্তেজিত দেখা গেল। -সথাছে বাবা 1--হনে ফান ছাট ভারী খু হলো । মাছের বাবা খেলেই তো ভালে! ইয়--বেশ সের পাচেক একটা পাওয়! যাবে--কী বলো? কিবো মাছের ঠ্রাকুর্শ 1 সে তা আরো ভালো মাৎস্যন্যায় ৪85 _-সের দশেক হবেই, ভাই না? তপন চিন্তিত হলো! । _তা হতে পারে। দ্শ-পনেরে!। সের হওয়াই তো! উচিত। --ভা হলে ভাই ওই ঠাকুর্দাকেই ধরো । বুড়ো হয়ে বেশিদিন বেঁচে থেকেই বা ওর লাভ কী? ওর কি এখন মারা যাওয়াই উচিত নয়? এ সঙ্থন্ধে তোমার কী ধারণ ? তপনের ধারণাটা! জানা গেল ন1। তার আগেই রাধেশ্যাম স্থটো ছিপ আর টৌপ নিয়ে এল। তপন বললে, এখন চট করে, চ করে আনে! দেখি রাধেশ্যাম। ভুত করে লেগে যাওয়া বাক। উৎসধহ দিয়ে বললুম, হাঁ, লেগে যাও। কিন্তু ভাই, ওই ঠাকুদাকে ছেড়ো না। ওকে ধরাই চাই। - দেখা যাক ।-_-তপন গগ্ভীর হয়ে চৌপ গাথতে লাগল। ভারপর আমাকে জিজ্ঞেস করলে, কিহে, তোম।র মাছ ধরা-টরা আসে? _-ছেলেবেনায় পুটি মাছ ধরতুম।--আমাকে স্বীকারোক্তি করতে হলো। _ পুঁটি মাছ-হেঃ। বোঝা! গ্রেছে তোমার দৌড়-_তপল অন্থকম্পার হাসি হেসে ছপাৎ ছপাৎ করে বড়ি ফেলল জলের ভেতর । গম্ভীর হয়ে বললে, চুপ করে বসে থাকে! এখন- বুঝেছ ভো? বকবক করলে মাছ চারে আনবে না। | _ঠিক আছে। মাছ খাওয়ার সময়েই ভালে! করে মুখট৷ খোলা যাবে না হয়। তুমি ওই ঠাকুর্ধাটাকে কপাৎ করে পাকড়ে ক্ষেলো৷ ভাই, দেরী করো না। | তপন বললে, দে হবে। তুমি চুপ করে থাকে৷ । ৪৮ ভপন- রি চপ করেই আছি। নিরুপায় হয়ে চারদিকের শ্যামলিমাই দেখতে হচ্জে আমাকে । তপন বকের মতো ফাতনার দিকে তাকিয়ে। মাথার ওপর কাক উড়ছে, বাতাস বইছে, জল কাপছে। ঢেউন্ে ঢেউয়ে ফাতনা ছুলছে, কিন্ত কাছাকাছি মাছের কোনো চিছ আছে বলে মনে হলো না। _কৃই হে, খাচ্ছে না তো 1--আমি থাকতে পারুম না। --একি তোমার পু'টিমাছ পেয়েছ ঘে ফেললে আর টুপ করে গিলস ?--তপন বিরক্ত হলো! ; ধৈধ ধরতে হয়। _-আচ্ছা ধরছি। রা্েগ্যাম ঢা দিয়ে গেল। তাই খেতে লাগলুম বসে বসে। ভপনও চাষে চুমুক দিচ্ছিল। ঠিক তথুনি আমার চোখে পড়ল। ফাতনা বেশ সন্দেহজনকভাবে নড়ছে যেন। টিপ-টিপ-- টিপ-_ র - খাচ্ছে_ খাচ্ছে_্বলে যেই টেঁচিয়ে উঠেছি, সঙ্গে সঙ্গে বিষম চমকে গিয়ে আধ পেয়ালা গরম চা নিজের পায়ের ওপর ঢেলে ফেঙ্গল তপন। তারপর হেঁইয়ো করে ছিপে এক পে্সায় টান ! শই করে ছিপ আকাশে উঠল। কিন্তু বঁড়শি ফাকা। মাছ নেই_-মাছের আশ পর্স্ত নেই । দারুণ চটে কটমট করে আমার দ্বিকে তাকালো তপন। - অমন হাউমাউ করে চ্যাচালে ষে? _-ফাভলা নড়ছিল, তাই ওয়ানিং ৰিচ্ছিলুম তোমাকে । _-অমন ডাকাতে পড়া হাক ছাড়বে তাই বলে? তোমার চিংকারেই মাছ পালিয়েছে । মাঝখান থেকে আমার পা-টা শুদ্ধ, পুড়িয়ে দিলে ! .. | --এক মান মাছ খাইনি ভাই। নার্ভাস টেন্শনট! সামলাতে, পারিনি। _ কিন্তু সামলাতে হবে। না সামলালে আন্রও মাছ ফাওয়া মাৎস্যন্যায় ৪৯ জটটবে না তা বলে দিচ্ছি!_-তপন আবার ব্যাজার মুখে টোপ গেঁথে বড়শি ফেলল £ একদম স্পীকৃটি নই--বুঝেছ ? . বুঝেছি, বুঝেছি । আবার চুপ করে বসে আছি । তপনের মুখ অসাধারণ গম্ভীর --এসদিকে তাকিয়ে কথা বলতে আর ভরসা হচ্ছে না। এদিকের এটা সুপুরি গাছে কাকে বাস! বীপছে, তাই দেখছি এক মনে। ূ শ'ই-_সপাঁৎ-- আবার ছিপের আওয়াজে কিরে তাকালুম। আর একটা পেল্লান্ টান মেরেছে তপন । কিন্তু এবারেও বঁড়শি ফাকা! _সাছ কোথায় হে? তপন গে শে করে বললে, চুলোর । ওঠেনি দেখতেই পাচ্ছে । _-এবার তো ভাই আমি চ্যাচাই নি। উঠল না কেনতা হলে? র "সব টানেই মছি ওঠে নাকি? বিরক্ত কোরো না-চুপ করে থাকো । সব টানে কেন_ কোনো টানেই যে ওঠে না-_-ঘণ্টাধানেকের মধ্যেই সেটা বিলক্ষণ বোঝা গেল। বার ত্রিশেক ছিপ আকাশে উঠল, কিন্তু মাছের ঠাকুর্দী কেন-_-তার নাতির ন্যাজের ভগাটুকু পর্ধন্ত চোখে পড়ল না। রাধেশ্যাম কখন এসে পেছনে পাড়িয়েছে। হেসে বললে, এজ্ঞে মাছ খাচ্ছে নি কুচো চিংডিতে ঠৃকরে খাচ্ছে। - মুখ ফিরিয়ে বিকট একটা গর্জন করল তপন । ূ _-তোমাকে আর ওকঝ্জাদি করতে হবে না। মাছের ঠোকর 'আমি চিনি নানা ? রাধেগ্যাম কৃ'কড়ে গেল'ঃ এজ্জে চেনেন বই কি, আপনি নু রর ৰ ৫০ তপন-চারিত চিনলে কে চিনবে। কিন্তক-_ -আবার কিস্তক। গেট-আউট-_ সুড়সুড়ি করে সরে পড়ল রাধেশ্াম । ্‌ তপন গঞ্জগজ করতে লাগল £ মাছে খাচ্ছে না--শেখাতে এসেছে আমাকে । মাম! বাড়িতে গিয়ে ছোটমামাকে কত মাছ ধরতে দেখেছি আমি-_-ও' ব্যাটা ছোটমামার চাইতেও বেশি জামে নাকি ? এইবার আমার সন্দেহ হলো । তার মানে? ছোটমামার মাছ ধরাই বুঝি দেখেছ কেবল? নিজের হাতে ধরো নি নাকি কখনো? সবটাই থিয়োরিটিক্যাল নাকি ? _থিয়োরিটিক্যাল তো! কী হয়েছে! থিয়োরী থেকেই প্রাকৃটিস্‌। _আ। ্‌ তৎক্ষণাৎ আমি দমে গেলুম__ধুক করে নিবে গেল বুকভরা আশ11 তপনের সেই থিয়োরিটিক্যাল্‌ মাংস-পো।লাও রান্না আমি এখনে ভুলি নি। সে রাল্লার স্বাদ অবিম্মরণীয়। সারা জীবনেও তা ভোলবার জে! নেই। ছোট্ট মামার রহম্ত জানা থাকলে কে এই খামারে আসত ! আবার শাই করে ছিপের আওয়াজ এবং তপনের জয়ধ্বনি £ গেঁথেছি। গেঁথেছ! আমি ভড়াক করে লাফিয়ে উঠলুম £ সেই ঠাকুর্ধীই তে! ?* শক্ত করে পাকড়াও ভাই-_ছেড়ে। না ! -স্থাড়ছে কে? ছাঁড়াছাড়ির কারবার আছে নাকি আর 1-_ তপন গ্াড়িয়ে পড়ল £ জলের তলায় বসে গেছে মাছটা, উঠতে চাইছে না! আস্ছা, আমিও তপন চৌধুরী- দেখে নিচ্ছি তোমায়। স্ছেইয়ো ! মাৎস্যন্যায় ৩৬ আর একটা আনুরিক টান। এবং তারপর £ জলের তল] থেকে বিরাট একটি কালো বস্ত ডাঙায় ছিটকে চলে এল । ঠকাস্‌ করে একটা বক্ষিং গ্লাভের মতো! সেটা আমার কপালে পড়ল এবং তংক্ষণাৎ আমাকে নকআউট করে দিলে। _-উল্টে পড়েই আমি লাফিয়ে উঠলুম তক্ষুনি। _-কী মাছ হে, অমন কালো কুচকুচে ? মোক্ষম একটা গুতো মেরেছে আমায় । কালবোস ? না, কালবোস নয়। _-তবে কি কাতল! ! কাতলাই কি আমাকে কাত করল? _না, কাতলাও নয়।-_-তপনের মুখ শোকাচ্ছন্ন ঃ এক পাটি ছেড়া জুতো । _জ্যা ! আমি বাতাহত কদলী-বৃক্ষের মতো! আবার ধপাস্‌ করে বসে পড়লুম। জুতোই বটে...ম্তাওলা আর কাদায় জড়ানো কার এক পাটি বিরাট জুতো -_-জলের তলায় বাস করতে করতে এখন তার পাক! তিন সের ওজন। কার পদহীন জুতো এই বেল! দশটার সমস খামোক। আমাকে এমন করে জুতিয়ে গেল কে জানে ! তপন ঘেোতথেোোত করে বঙ্গল, বড়শিটাও ভেঙে গেছে হে! কোন্‌ রাষ্কেল যে বলতে না বলতেই এক অঘটন ! সেই বিচ্ছিরি বিকট জুভোটার ভেত্তর থেকে একটি আওয়াজ উঠল ছটাং এবং পরক্ষণেই বাইরে লাকিয়ে পড়ল মাঝারি সাইজের এক গন্থ্দা চিংড়ি । দতশ্মাহৃত্তিউ কৌন্তেয় যুদ্ধায় কৃতনিশ্চয়ঃ-__গীতায় স্রীভগবানের বাম্। জুতাহত চিত্তের ব্যথ! ভূলে গিয়ে আমি চিংড়ির দিকে বাবিত হলুম আর তপন-- -স্থাচ্ছে--থাচ্ছে-_বলে হু নগ্বর ছিপে ' লাগালো আর একটি ভন্বাবছ টান। &২ তপন-চাঁরত বিহ্যংবেগে বড়ী আকাশে ধাবিত হলো এবং একটি চিৎকার শোনা গেল ঃ ক্যা-কৃকৃ! মাছে ক্যাককৃ করে ডাকে নাকি? এমন তো কখনো শুনিনি । গলদা চিংড়ি ভুলে গিয়ে আমি ফিরে তাকালুম। এবারেও বঁড়শিতে আর একটা কালো রঙের বস্তু না-আর এক পাটি জুতো নয়! রীতিমতো জীবন্ত একটা প্রানী । ক্যা ক্যা করে উড়ছে এবং আমাদের মাথার চারপাশে. ঘুরপাক খাচ্ছে সে। রোমাঞ্চিত কলেবরে মুগ্ধ স্বরে আমি বলদুম, উড়ুকু মাছ! _-তোমার মাথা--তপন বিকট রকম মুখ ভ্যাংচালো £ দেখতে পাচ্ছ না! ওটা কাক! র _-কাক !__শুনে আমার কেমন ভিরমি লেগে গেল £ কাক কি জলে থাকে? অবশ্য কাকের অসাধ্য কিছু নেই, কিন্তু সে ষে জলচর প্রানীও বটে একথা তো কোনোদিন__ _থামো! কী যে বকছ তার ঠিক নেই!-তপন ঘেরা করে একট! আওয়াজ ছাড়ল : জলচর হবে কেন? উড়ে যাচ্ছিল _ বঁড়শিতে ডানা আটকে গেছে। এখন বোঝো ঠ্যালা ! আমি কাকের মতোই হা করে সেই উড়ন্ত জয়ধবজার মতো কাকের দিকে তাকিয়ে রইলুম। কেদার বাড়ুজ্যের উপন্যাসে পড়ে- ছিলুম কার ছিপে যেন ঝুলন্ত বাছুড় আটকে. গিয়েছিল । কিন্তু বডশিতে উড়ন্ত কাক ধরা একমাত্র/তপনের পক্ষেই সম্ভব-_তার মতে৷ প্রতিভাবানই কেবল এমন কীতি অর্জন করতে পারে। বলতে যাচ্ছি ধন্য ধন্য--কিস্ত-_-কাকের ঝবটপটানি আর বিশ্রী ক্যাক্যা আওয়াজে ততক্ষণে শ-দেড়েক কাক বিকট কোলাহলে জড়ো হয়ে গেল সেখানে ।: আর ব্যাপারটা ভালো করে অনুধাবন করার আগেই আমার ব্রম্মতালুতে খটাস্‌ খটাস্‌ করে গোটা কয়েক ঠোকর পড়ল। মোটেই মনোরম বোধ হলো না সেগুলো ! নাধস্যন্যায় ৬৩ তপন হাহাকার করে উঠল £ দ্লাড়িয়ে আছো কী? সমবেত আক্রমণ ! ঠুকরে মাথা ফুটে! করে দিলে! পালাও-_পালাও-_- বলবার দরকার ছিল না। তার আগেই ছুজনে ছুটেছি। ঘরে ঢুকে ধড়াস করে দরঞ্সা বন্ধ করে দিয়ে তবে নিষ্কৃতি। কাকের কলধ্বনি থামল প্রায় পনেরো মিনিট পরে। সাবধানে বাইরে বেরিয়ে দেখি “অল কোয়ায়েট 'অন দি ফিশিং ফ্রণ্ট !, ছিপটার অর্ধেক স্থৃতো নেই, কাকেরা নেই, মেই গলদ। চিংডিটাও নেই। কেবল সেই প্রকাণ্ড জুতোটা। যুদ্ধক্ষেত্রের একটি স্মারক- স্তম্ভের মতো৷ আমাদের দিকে প্যাট প্যাট করে তাকিয়ে আছে। দীর্ঘশ্বাস ফেলে তপন বললে, ওঃ ! জুতোর ঘ! লেগে কপালের একটা দিক আমার ফুলে উঠেছিল, কাকের ঠোকরানিতে মাথাও জ্বালা করছিল বিলক্ষণ। তবু তপনের জগ্তে সহানুভূতি হচ্ছিল আমার । সাস্তন! দিয়ে বললুম, ছুখ কোরো না ভাই, অন্তত একটা চিংড়ি মাছও তো তুমি ধরেছিলে ! হু । | -আর একট উড়ন্ত কাক। পৃথিবীতে তুমিই সেই প্রথম ব্যক্তি যে ছিপ দিয়ে আকাশ থেকে কাক ধরেছে । এই গৌরবের কথাও তো৷ ভোলবার নয় । -থামো ! এক চিৎকারে আমাকে থামিয়ে দিয়ে তপন সেই জুতোটার দিকে তাকিয়ে রইল। তাকিয়ে রইল দার্শনিকের মতোই । রাধেশ্টাম দিব্যি খিচুড়ি আশার ডিম ভাজা রান্না করেছিল খেয়ে শরীরটা এলিয়ে এল। চারদিকের শ্যামলিমা পান করে, জুতোর ঘা! খেয়ে এবং কাকের সঙ্গে যুদ্ধ করে পরিশ্রমটাও নেহাত কম হয়নি। একটা তক্তপোশের 'ওপর লম্বা! হয়ে শুষে পড়লুম।. হাঁড়ির মতো মুখ করে একটা! চেয়ারে বসে আছে তপন। কপালে ভ্রকুটি। ৫৪ তপন-চার _-ওহে, শুয়ে পড়ো, জিরিয়ে নাও একটু । _ হা ।-তপন আমার দিকে ফিরে তাকালো £ আচ্ছা, পাঁচটা গলদা চিংড়ি পাওয়া গেলে কেমন হয় বলো তো? পাঁচটা গলদা চিংড়ি। শুনে কেমন খটকা! লাগল । --পাবে কোথায় ?. _-ধরো যদি পাওয়াই যায় ? _তা হলে খাওয়াও যায়'। কিন্ত পাচ্ছ না যখন, ভখন মিথ্যে মন খারাপ করে কী হবে? বরং একটু ঘুমিয়ে নিলে-_ তুমি ঘুমোও ।_ গৌজ হয়ে জবাব দিলে তপন। দিব্যি ঝিরঝিরে হাওয়া দিচ্ছিল, কখন ঘুমিয়ে পড়েছি জানি না। যখন জেগে উঠলুম, বিকেলের রোদ লাল হয়ে এসেছে। আর দেরি নয়-_-এবার ফিরতে হবে । কিন্তু নামতে গিয়ে দেখি জুতো জোড়া নেই। কোথায় গেল জুতো 1? নতুন কিনেছি--একমাসও হয়নি । চুরি-টুরি গেল নাকি ? কী সর্বনাশ ! ছুটে বেরিয়ে এলুম। দেখি, পুকুরঘাটে তপন বসে আছে পরমহংসের মতো । ব্যাকুল হয়ে বললুম, ওহে, তোমার রাধেশ্টাম কোথায় ? --সে চায়ের জন্যে গরম সিঙাড়া আনতে গেছে £ কেন-- কী দরকার তাকে ?. _-দরকার তাকে নয়-আমার জুতো জোড়াকে। নিয়ে পাচার করল নাকি? _ছিঃ ছিঃ! রাধেশ্যাম জুতো! চুরি করে না। তোমার জুতো! আমার কাছেই আছে। - আছে? বীচালে!-আমি কাতর হয়ে এগ্গিয়ে এলুম, কই কোথায় ? তপন প্রশাস্ত হাসি হেসে বললে, ওই পুকুরে । --আয1।-- _শুধু তোমার নয়-আমার জ্বোড়াও আছে সেই সঙ্গে। _একটা স্বগর্শয় দীপ্তিতে তপনের মুখ উচ্ভাসিত £ আর সেই বড়ো জুতোটাও । প্রায় ছু ঘন্টা আগে দড়ি বেঁধে ছেড়েছি। পাঁচটা গলদ! চিংড়ি অন্তত পাবই--কী বলো? আমি ধপাস করে ঘাটলার ওপর বসে পড়লুম। তপনের জতোর দাম আমার জানা নেই_কিন্তু আমি আঠারোটি নগদ টাকা দিয়ে অনেক শখ করে কিনেছিলুম ! তপন আবার সেই ন্বর্গয় হাসি হেসে বঙ্গলে, কিচ্ছু ভেবো না ভাই--দাতদিন পরে এসে টেনে তুলব। তার ভেতর চিংড়িরা নিশ্চগ্র এসে বাসা করবে ওতে । খালি হাতে আর ফিরে যেতে হবে না। এই বুদ্ধিটাই বেশ ভালো হয়েছে--নয় কি? আরো! একটা ভালো বুদ্ধি আছে আমার মনে হলো- সেটা এই মুহূর্তে একটি হত্যাকাণ্ড ঘটানো । কিন্তু এক জোড়া জুতোর জন্যে বন্ধুকে তে৷ আর সত্যিই খুন করা যায় না! তপন বললে, টু বি ফ্র্যাঙ্ক, আবার প্যা-প্যা--প্যাচে পড়া গেলহে! | প্যাচে পড়বার এবং পড়াবার একটা! স্বাভাৰিক শক্তি তপনের আছে, স্থতরাং আমি খুব বিচলিত বোধ করপুম না। ওর দিকে একবার তাকিয়েই তক্তপোশের ওপর সাক্তানো পেশেন্সের তাসগুলগোকে অনুধাবন করে চললুম । _-আমি মরছি নিজের জ্বালায়, আর তোমার খালি তাস আর তাস !-_-চটে গিয়ে তপন তাসগুলোকে এলোমেলো করে ছড়িয়ে দিলে। হাহা করে ওঠবারও সমর পাওয়া গেল না। _ভাঙ্গোও লাগে এসব ! যেমন রাবিশ তোমার গল্প, তেমনি বিশ্রী তোমার হ্যাবিট। 'এত কুঁঢেমি করতেও পারো! ! অগত্যা তাসগুলো গুছিয়ে তুলে ফেলতে হলো । বঙগলুম, সকালবেল।তেই একেবারে মার্-মার করে ছুটে এসেছ যে। ব্যাপার কী? _মাথ। আর মুড! ভারী মুশকিল হয়েছে স্থকুমার। মিসেস ঘো-ঘো-ঘেো!-- '--মিসেস ঘো--ঘেো আবার কে _ঘো-ঘে! নয়__ঘোষাল !_-এতক্ষণে তপন নামটাকে সম্পুর্ণ ওগরাতে পারল : এখানকার গার্লস্‌ স্কুগের নূন হেড-মিষ্টেস | আজ বিকেলে তিনি, আমাদের বাড়িতে" আসছেন । _কেন ?--এইবার আমার মনে সন্দেহের ছায়া পড়ল : তুমি কি তার স্কুলে চাকরি চাও 1 তোমার ব্যাঙ্কের চাকরিটা তো নেহাত মন্দ লয়! নাকি ভর্তি হতে চাও আবার? কিন্ত বি-এ পাস করবার প্র স্কুলে কি আবার ভন্তি হওয়া যায়? তা-ও মেয়েদের স্কুলে? . ভার ওপর তোমার মুখে তো আবার গোঁফও রয়েছে। ওই গৌফস্ুদ্ধ তোমায় ভর্তি করুতে কি উনি রাজী হবেন ? -- - তগন এবার দস্ভরমতো -ঘাকে বলে-প্গনিজয়ান। অভার্থনা ৫১ - লুক হিয়ার সুকুম।র, সব সময় ইয়াফি ভালো! লাগে না। _কোন্‌ কোন্‌ সময় ভালো লাগে? বলে ফেলো- নোট করে রাখি। --অল্ রাইট, আমি চলে যাচ্ছি-_ চলেই যাচ্ছিল, আমি খপ করে ধরে ফেললুম । - বোপো, বোসো- ঠাণ্ডা হও। ঘোলের সরবত আনিয়ে দিই । হ্যাং ইয়োর ঘো-ঘো- - _-যাল? | _না, সরবত | ওদিকে মিসেস ঘো-ঘে-ঘো-_ _ঘোল ? __না_না_ হেড-মিষ্টেস £ সত্যি ভাই, খুব মুশকিল হয়েছে। কা যে করি, বুঝতে পারছি না। তপনের মুখের চেহারা দেখে এবারে আমার মায়া হলো £ কী হয়েছে বলো তো ? বিশদ বিবরণটা জানা গেল এতক্ষণে । মিসেস'ঘোযাল তপনের মা-র বান্যসখী। একই স্কুলে ছ-জনে পড়তেন। তপনের মা ক্লাস টেন পর্বস্ত এসেই থমকে যান, মিসেস ঘোষাল টক টক করে বি-এ পাস করেন। মিস্টার ঘোষালকে বিয়ে করেছিলেন, কিন্ত সে ভদ্রলোক বছর সাতেক পরেই আফ্রিকা না! আমস্টারডাম কোথায় একটা কাজ জুটিয়ে উধাও হয়েছেন। কারণ আর কিছু নয়, ভদ্রমহিলার পরিচ্ছন্নতার বাতিক অসাধারণ । প্রত্যেকটি ভ্রিনিস টিপ-টপ রাখা চাই। চেয়ারে পা তুলে বসলে প্রলয় ঘটাবেন, টিপয়ের ফুলদানি আধ ইঞ্চি এদিক ওদিক হলে বিয়ের চাকরি যাবে, খাওয়ার সময় কেউ হুশ-হাঁশ আওয়াঙ্ করলে টেবিল ছেড়ে উঠে যাবেন। শোনা যায়, দিনে চার বার দাত মান্বতে আপত্তি করাতেই নাকি শেষ পর্যস্ত মিস্টার দ্রোযালকে প্রাথ নিয়ে উগাণ্তা কিংবা ৬০ তপন-চারিত উরুগুয়েতে পালাতে হয়েছে । এসব রোমাঞ্চকর কাহিনী তপন তার মা-র মুখেই শ্রনেছে। _এ রকম ভয়ানক জীবকে তুমি বাড়িতে আসতে বললে কেন? --আরে, আমি বলেছি নাকি? কাল একটা আ্যকাউণ্ট খুলতে ব্যাঙ্কে এসেছিলেন । এ-কথ1 সে-কথার পরেই ফস্‌ করে চিনে ফেললেন! বললেন, "ও তুমি লোকনাথবাবুর ছেলে? তোমার মার নাম তো! মালতী ? আরে মালতী তো আমার ছেলেবেলার সই, স্থরবালা বললে তখুনি চিনে ফেলবে । আমি বুঝতে পারলুম এই সেই সাংঘাতিক মিসেস ঘোষাল । আর উনিও সঙ্গে সঙ্গে নাক কুঁচকে বললেন, “ভুমি নপ্তি নাও কেন? ছি--ছি-_ থুব হ্যান্টি অভ্যেস। ওসব ছেড়ে দাও ।, -_-তার পরেও তুমি কে আসতে বললে ? - দুত্বোর !-_-তপন আবার চটে উঠল £ আমি কি পা-পাগল ? নিজেই বললেন, “আমি কল সন্ধ্যের দিকে যাৰ তোমাদের বাড়িতে ।, আমি বললুম “বাবা মা! কেউ এখানে নেই-_ছু মাসের জন্গে হরিদ্বারে গেছেন, একেবারে কুম্ত-ন্লান সেরে ফিরে আসবেন ।” উত্তরে বললেন, “কেন, তুমি তো আছো । আমি তোমাদের বাড়ি দেখতে যাব । কিন্তু খবরদার, চাজলখাবারের ব্যরস্থা কোরো না। আমি যখন- তখন যা-তা! খাইনে । _-ষাক, এক দিক থেকে বাচোয়া । _-তা বটে। কিন্তু ভাই, এই মাসখানেকের ভেতরে বাড়ি- ঘরের' অবস্থা তো সঙ্গীন। ঝুল-ধূলোর জন্যে ভাবছি না-ও ঝেড়ে- টেড়ে সাফ করা যাবে। কিন্তু আর সব যা হয়ে রয়েছে তাই-_- রেগুলার সুন্দরবন! চাকরটা আবার পরশু" দেশে পালিয়েছে__ এই সেভেনথ, টাইম ওর চাচা মারা গেল। একটা জিনিস লক্ষ্য করেছ হে? ওদের অনেক চাচা থাকে আর তারা খুব কুইকৃলি অভ্যর্থনা ৬১ মারা যায়। ৃ আমি চিন্তা করে বললুম, হু, চাচাদের মৃত্যুর হার খুব বেশী। যাক, ও নিয়ে তুমি.কষ্ট পেয়ো না_-তোমার আর তো চাচা নেই। তা এখন কী করতে চাও? _-তুমি আমাকে হেল্প করো । বিপদে বন্ধুর কাছেই আগতে হয়। আমি আবার ব্যাপারটা চিস্তা করে দেখনুম। তারপর বললুম, তোমার সেই যে মুখোশটা-_মানে সেই অয়েল মান্ক--সেটা এখনো আছে নাকি? যদি থাকে, তা হলে আমি বরং সেইটে পরে সন্ধ্যেবেলা তোমাদের বাগানে দাড়িয়ে থাকব। মিসেস ঘোল, আই আম সরি-_-মিসেস ঘোষাল গেটে ঢুকতেই একটা তাড়া লাগার ঘোত করে। উধ্বশ্বাসে পালাবেন এবং ভৃমিও-_ তপন তড়াক করে উঠে দাড়ালো । রেগে বললে, তোমার সঙ্গে কথা বলাই ঝ-ঝ-ঝকমারি। যা পারি, একাই করব। কারুর সাহায্য আমার দরকার নেই। আমি বললুম, কারেক্ট। একেই বলে তেজ। তোমার কথা ভেবেই তো বিবেকানন্দ বলেছিলেন, “হে বীর সাহস অবলম্বন করো- তপন দরঞ্জাটা দড়াম্‌ করে আছড়ে বেরিয়ে গেল_ যেন বেশ রোমাঞ্চকর নাটকের প্রথম দৃশ্যে ঘবনিকা পড়ল। আর যবনিকা পড়ে ভালই হলো, কারণ বিবেকানন্দের বাণী থেকে ওই একটিমাত্র লাইনই আমার মুখস্থ । ম্যাট্রিক থেকে বি-এ পর্যন্ত বাংলার সব পরীক্ষাতেই রচনা লিখতে গিয়ে “এই জন্কই কবি গাহিয়ছেন? বলে ওই লাইনটাই আমি চালিয়ে দিয়েছি । কিন্ত বিকেলে অফিস থেকে মেসে ফিরেই মনটা কি রকম ' ৮২ ভপন-চরিত চিড়বিড় করতে লাগল। যেন একট। আরশোল। বেরিয়ে এসে ক্রমাগত আমার পায়ে নুড়ম্ড়ি দিচ্ছে। শেষে বুঝতে পারলুম, ওটা আরশোল! নয়-_বিবেক। তপনের এই দারুন দুঃসময়ে বন্ধু হিসেবেও অন্তত আমার ওর পাশে গিয়ে দাড়ানে। উচিত। অগএব বেরিয়ে পড়া গেল। দরজার কড়া নাড়তে হলে না-_দেখি সামনেই ফ্াড়িয়ে। মুখে ভরাট খুশির হাসি--ওর পরিপাটি করে ছাটা সর গোঁফ পথস্ত সেই খুশিতে চকচক করছে। বোঝ। গেল, একটা স্বর্গীয় পরিতৃপ্তিতে ও উদার হয়ে আছে--আমার ওপর এতটুকুও রাগ নেই এখন । হেসেই বললে, ক'টা বেজেছে হে? ঘড়ি দেখে বললুম, সাড়ে পাঁচটা। _-তা হলে মিসেস ঘো-ঘো'__ _-ঘোল বলতে চাইছ ? _মাঁনাঘোষাল পাঁচ দশ মিনিটের মধ্যেই এসে পড়বেন । দেখে যাও কেমন সাজিয়েছি বসবার ঘরটা । তোমার মনে হবে যেন কলকাতার আর্টিন্টি হাউসে এসে ঢুকেছ। __রিয়্যালি?-_শিহরিত হয়ে আমি ভেতরে পা দিলুম। মেজেতে কার্পেট পাতা । .চেয়র-টেবিলগুলে! চক-চক ঝক- ঝক -করছে। একটা ফুলদ'নিতে গোটা! কয়েক গাঁদা ফুল সাঙ্জানেো। তপন দারুন. খুশী হয়ে গোৌঁফে ভা দিলে । বললে, দেখছ কী? আক্গ ছুটি নিয়েছিলুম অফিস থেকে । সারা ছ্বপুর বসে বসে চেয়ার- টেবিল বাণিশ করেছি । _বাণিখ, করেছ ? তুমি ?-তপনের ওপর আমার ভক্তি বেড়ে গেল £ এ বিস্তেও তোমীর আছে নাকি? | -বিদ্কে থাকে মাকি 1--তপন ছে-হে করে হালক। আ্যাকোরার আভার্থনা ৬৩ করতে হয়। বললে বিশ্বাস করবে ন-_জীবনে এই আমার প্রথম বামিশ। আর কর্মলাট।--কী বলে গিয়ে--একেবারে ওরিজিন্যাল ! - আ্যা 1 _হু'হ'-পরে বলব। আচ্ছ।, এবার দেয়ালের দিকে তাকাও । আমি তাকালুম এবং লাফালুম। তৎক্ষণাৎ । _ এসব কি হে? _-ছবি। _ কার ছবি? কিসের ছবি? - কিসের ছবি? আমি তার কী জানি? কিন্তু কেমন দেখাচ্ছে 'ভাই বলো। বললুম, বুঝতে পারছি না ভাই । মাথা ঘুরছে । ওটা কি হে? গোবরের গাদা নাকি ? ূ - না, নীলবসন! সুন্দরী। তার পাশে কী আছে বলো দেখি ? আমি বললুম, একটা ভাঙ! মোটর? না না, শ্যাওড়া গাছে পা দিয়ে মাথ!| নিট করে একটা পেত্রী ঝুলছে বোধ হয়? __ওটা প্রতীক্ষা । রাজকন্যা প্রাসাদশিখরে বসে আছে। আমি গোটাকয়েক খাবি খেলুম। একটু সামলে নিয়ে বললুম, রাজকণ্য। প্রাসাদশিখরে কেন প্রতীক্ষা করছে ভাই? ঘুড়ি ধরতে চায় নাকি ? , তপন ব্যাজার হয়ে বগলে, ঘু-ঘুড়ি ধরবে কেন? রাজপুত্র পক্ষীরাজে আসবে কিনা, সেই জন্যে ওয়েট করে রয়েছে। --আ-অ। --তার এধারে যেটা দেখছ-- --ধাক থাক--মার দরকার নেই। যা বলেছ ভাই, কলকাতার বআর্টিত্ি হাউস এর কাছে একেবারেই নাবালক. কিন্তু এসব মডার্ন ৩৪ তপন-চরিত আট রাতারাতি তুমি পেলে কোথায় ? _পাব আবার কোথায় ? নিজেই আকলুম বসে বসে _ত্যা ! মাথা ঘুরে পড়েই যাচ্ছিনুম, অনেক কষ্টে সামলে নিতে হলো। তপনের মুখট। আমি ভালো করে দেখতে পেপুম না-শুধু ওর পরিপাটি ছাটাই করা গোঁক জ্োড়াই নাচতে লাগল চোখের সামনে। - আমারও. প্রথমে খেয়াল হয়নি-তপন বলে চলল, "ঘর সাজাতে সাজাতে হঠাৎ নজরে পড়ল। দেখি দেওয়ালে রাধাকেই, কালীঘাটের পট, মা-র বোনা কার্পেটের “পতি পরম গুরু" কোন্‌ এক সায়েবের সঙ্গে তোলা বাবার অফিসের এক পেক্সায় গ্র,প ফটো । রাবিশ! এসব দেখলে মিসেস ঘো-ঘো-_- _-ষাল-_ _্যা, ঘোষাল নিশ্চয় মাথা ঘুরে পড়ে যেতেন । তাই ভাবলুম, নিজেই যা পারি করে ফেলি। মডার্ন আর্ট তে! কেউ বোঝে না. আমার ছবি দ্রিয়েই কি-কি-কি-- _-কিছ্ষিন্ধ্যা কাণ্ড করতে চাও ? _-না, কিস্তিমাত করতে চাই। ব্যস লাল-নীল পেন্দিল,, কালি, এই সব নিয়ে বসে গেলুম । বলে বিশ্বাস করবে না মাত্র ছু ঘণ্টায় বা-বারোখান। ছবি ম্যানেজ করে ফেলেছি । কী মনে হয় তোমার ? ইম্প্রেপড় হবেন ভদ্রমহিল। ? মানে মিষেস ঘো-. ঘো-_ ূ আমি ঘ্েল বলতে যাচ্ছিলুম, .কিস্তু আর বলা গেল না।, পৃথিবীতে অনেক রকমের শক্‌ আছে--কোনোটা সহা করা যায়», কোনোটা স্রেফ ধরাশায়ী করে ফেলে মানুষকে । আমার গল অভার্থনা উ& শুকিয়ে উঠল, বৌ বৌ করতে লাগল মাথার ভেতরে । দেখলুম, সামনেই টিপযের ওপর একট কাচের জগে লাল রঙের কী রয়েছে। নিশ্চয় সরৎ। ওরই এক গ্রাস খাওয়া যাক--নইলে তপনের কলাচার এই গদাঘাত আমি সইত্তে পারব না। গেলাম কই? গেলাস নেই। জগ মুদ্ধ তুলে গলি ঢালতে যাচ্ছি, হা-হা করে সেটা কেড়ে নিলে তপন। --আরে আরে- খেয়ো না, খেয়ো না! মারা পড়ে ষাবে। _মারা পড়ব? কেন? জরবত খেয়ে কেউ কখনো আবার মারা পড়ে নাকি ?-আমি আবার হাত বাড়ালুম | _কে বলেছে ভোমায় সরবত ?--জগটা নিয়ে তপন চট. করে সরে গেল নাগাগের বাইরে 2 ও তো কাজি-মেশানো লাল জ্রল। ও? ভেতরে রয়েছে ছ-ছুটো জ্যান্ত ট্যাংরা মাছ--ধা করে একটা গলায় ঢুকে গেঙ্গেই আর দেখতে হবে না। মানে, মিসেস ঘো-ঘো- ঘো-মরুক গে, সেই ভদ্রমহিলাকে চমকে দেবার জন্যে একটা অরিজিন্ঠাল আযকৃআকৃ-আযাক্যু-কথাটা বলবার জন্যে তপন আকু-পীকু করতে লাগল আর আমি বিধ্বস্ত হয়ে ধপাত করে সামনের চেয়ারটাতেই বসে পড়লুম। আর বনে পড়বার সঙ্গে সঙ্গেই মনে হলো, তপনের এই আর্টিস্ট হাউসে আরো মিনিট ত্য়েক থাকলেই একটা শোচনীয় হর্ঘটনা ঘটে যাবে । হয় আমি প্রাণ নিযে পালাব__নইলে আমার জান বেরিয়ে যাবে আমাকে জানান না দিয়েই। ভেবে-চিন্তে দেখলুম, আমার দিক থেকে প্রথমটাই স্থবিধে এবং আমি উঠে দাড়াতে গেলুম । কিন্তু সংসারে বসে পড়া যত সহজ, উঠে ফ্াড়ানো তার চেয়ে শের কঠিন । দেখলুম. চেয়ারটার হটো অভিসন্ধি। হয় আমাকে *টেনে রাখতে চায়-_-নইলে আমার সঙ্গে উঠে আসতে চায়। কোনো মতলবটাই তো ভালে! বলে বোধ হচ্ছে না! একট! কুটিল সন্দেহে আমার মন ভরে গেল। গু তপন-চাঁরত _ব্যাপার কি হে তপন? তোমার চেয়ার যে আমায় ছাড়তে চায় না! এর মানে কী? --ছাড়তে চায় না?--তপন তার সরু গোঁফ আলো করে মনোরম একটি হাসি হাসল £ ও কিছু নয়__বানিশ ! _-কিছু নয়, বামিশ? এ কিসের বাদিশ ? চেয়ারের সঙ্গে চেপে ধরবে বানিশের এত বাড়াবাড়িই বা কেন ?_মরিয়া হয়ে দাপাদাপি শুরু করে দিলুম আমি । পরিষ্কার বুঝতে পারলুম, এই চেয়ার ছাড়বার আগে অনেকখানি জামাকাপড় এবং বেশ কিছুটা ঘাড়ের চামড়ার মায়া আমায় পরিত্যাগ করতে হবে । আর একসঙ্গে এতখাশি ত্যাগন্থীকার আপাতত সম্ভব নয় বলেই মনে হলো আমার । তপন উৎসাহ দিয়ে বললে, ট্রাই- ট্রাই এগেন, ঠিক উঠে পড়বে । মানে গদের আঠাটা একটু বেশী পড়ে গেছে কিনা, তাইতেই-_ -গঁদের আঠা ! _ ইয়ে, ওই গঁদের সঙ্গে লাল জুতোর কালি মিশিয়েই বামিশটা তৈরী করেছিলুম কিনা! আমার ওরিজিন্তাল ফর্-ফর্-ফর্‌-_ ওর ফর্-ফর্‌ শুনে প্রাণ ধড়ফড় করে উঠল আমার । আমি হাহাকার করে বললুম £ তুমি ক্রিমিন্তাল- তোমার ফাসি হওয়া উচিত। তার পরেই “টু বী অর নট টু বী গ্যাটস্‌ গ্ভ কোশ্চেন / সমস্ত ইচ্ছাশক্তি দিয়ে ভাবতে চেষ্টা করলুম, আমি হাউই-_আমি উক্কা-_ আমি রকেট--আমি ভস্টক নশ্বর ফিফটি ফাইভ! একটি উল্লম্ষন, জামার আর্তনাদ এবং ছিটকে উঠে দেওয়ালে ঠিকরে পড়া ! “আমি অবসান নিশাবসান 1, নাকে চোট লেগেছিল দারুন, কিন্তু কাপড়-জামার দিকে তাকিয়ে সে ব্যথ! নিতাপ্তই মরাচিকা বলে বোধ হলো । দেখি, জামা-কাপড় বানিশের রঙে-একাকার। আর পাঞ্জাবির খানিকটা অংশে জয়ধবজার মতো উড়ছে চেয়ারের গায়ে আদ্দির নতুন জামাটা অভার্থনা ৬৭ এক-ধোপের বেশী গায়ে পরিনি ! আমি চ্যা-্ট্যা করে আর্তনাদ করলুম £ আই সে তপন, আমি তোমার নামে কেন করব। তপন কী বলতে যাচ্ছিল, সঙ্গে সঙ্গেই বাইরে থেকে ভারিকী মেগ্নেলী গলার ডাক এল £ তপন আছেো--তপন ! _-এসে গেছেন !__তপন চিড়বিড়িয়ে উঠল £ আম্মুন মাসীমা, আস্থন।-_তারপর ধিক্কার-ভরা গলায়--যেন সব অপরাধ আমার _-এমনিভাবে বলে চলল £ ছি-ছি, কী একটা সীন ক্রিয়েট করলে ? আর কার্পেটটাও কী বিশ্রীভাবে কুচকে দিলে ওদিকে-_রাম রাম! রাগের মধ্যেও বলতে যাচ্ছিলুম, ভদ্রমহিলা ঘরে ঢোকার আগে ওই মারাস্্ক চেয়ার তিনটে সরাও, কার্পেট নয় পরেই হবে ; কিন্তু ঠিক, তক্ষুনি একই সঙ্গে ছুটো ঘটনা ঘটল--যাকে বলে ডবল, 'আকৃশন! তপন এধার থেকে কুঁচকে যাওয়! কার্পেটে জোরে একটা টান মারল আর ওদিক থেকে চৌকাট পেরিয়ে সেই মুহুর্তে ঘরে পা দিলেন মিসেস ঘে-ঘো-_ঘোবষাল। চকিতের জন্যে আমি দেখতে পেলুম একখানা গোল মুখ, কালো ফেমের এক জ্বোড়া বিরাট চশমা, একটা চওড়া শাড়ির পাড়, একটি ঝুলন্ত ভ্যানিটি ব্যাগ এবং পরক্ষণেই কানে এল একটি তীক্ষ চিৎকার £ ও মা গো ! গোল মুখখানা, চশমা, ব্যাগ এবং একটি বপু মুহুর্তের মধ্যে দেখ! দিয়েই দ্বিগুণ বেগে দরজ্বার বাইরে অদৃশ্য হলো । জুতোপরা এক জোড়া পা একবার শৃন্যে নেচে উঠল, ধপাত করে কী যেন আছড়ে পড়ল, সি'ড়ি বেয়ে কে ষেন ডিগবার্জি খেলো, তার পরেই অল্‌ কোয়ায়েট অন্‌ দি ফ্রণ্ট ডোর! মিসেস ঘোষাল হয়ে যিনি আবিভূত হয়েছিলেন, মিসেস ঘোল হয়ে গড়িয়ে চলে গেলেন তিনি। এমনিই হয়ে থাকে--অন্তত বিজ্ঞান তাই বলে। কার্পেটের ৬৮ তপন-চাঁরত কোণায় পা থাকলে এবং সেই অবস্থায় কার্পেটে একটা হাযাচকা টান পড়লে সেই পদাধিকারী কিংবা কারিপঈী-_মাধ্যাকর্ষণের স্বাভাবিক নিয়মটা মানতে বাধ্য। চিরদিনই তা মেনে আসছে। তারই প্র্যাক্টিক্যাল ডেমনস্ট্রেশন দেখে আমি মুগ্ধ হয়ে চেয়ে রইলুম। বাইরে বাগান কাপিয়ে দ্রুত পদধ্বনি উঠছে। প্রাণ হাতে করে পালাচ্ছে কেউ-_তাকে ফাস্ট এইড নেওয়ানো যাবে বলেও মনে হলো না। তপন কার্পেটের ওপরে বসে পড়েছে-_ভারই আকা ছবির সেই গোবর-গাদা-না-_না--লীলবসনা স্বন্দরীর মতো। আমি বলতে যাচ্ছিলুম, অস্তত ভদ্রমহিলা এ যাত্রা তোমার মারাত্মক চেয়ারের হাত থেকে তো বেঁচে গেলেন__কিস্তু সব সাম্বনাই দেওয়া কী ষায় সব সময়ে? আরো! নিজের নতুন পাঞ্জাবির আধখানা চেয়ারের গায়ে ধ্বজার মতো শোভা পাচ্ছে যখন? দরজার বাইরে ঘট-ঘট-ঘটাস করে বিরাট আওয়াজ হলো একটা । মনে হলো, গোটা দশেক গুড়ের হাড়িকে এক পেল্লায় লাঠির ঘা বসিয়ে চৌচির করল কেউ । কিন্তু বাধ্যতামূলক সঞ্চয়ের হিসেব কবতে গিয়ে সকাল থেকে আমার মাথা ঘুরছে, কাজেই গুড়ের হাড়িই ফাটুক আর মফন্বল শহরের বিখ্যাত গোল গাড়িই উলটে যাক-_-ও সব ভাববার সময় আমার ছিল না। কিন্ত পরক্ষণেই ঘরে ঢুকল তপন । আমার. পরম বন্ধু তপন চৌধুরী। নাকের নিচে সেই মোলায়েম সরু গোঁফ, মুখে মাখন মার্কা হাসি--পরনে চোঙার মতো কালো রঙের ট্রাউজার-_নর্দঘমা ্র্যাণ্ড গোছের,কী একটা নাম। র -_কিহে, গ-গল্প লিখছ নাকি ? বেড়ে আছো! পিত্তি লে গেল তপনের হাসি দেখে। র | _ গল্প লিখছি না, কমপালসারি সেভিংসের হিসের করছি। _ ফেলে দাও হিসেব । এমন চ-চমৎকার সকাল-_ছুটির দিন-_- এই কি হিসেব লিখবার সময়? . উঠে পড়ো, উঠে পড়ো হে সহ-স্-ক্_ বিরক্ত হয়ে বললুম, আমি শুশুক নই--আমি মানুষ । আমার নাম সুকুমার | -যে-রকম মুটিয়ে যাচ্ছ তাতে তোমাকে শু-শু-শুক বললে অন্যায় হয় না।_তপন একগাল হাসল £ ওঠো । -কোথায় উঠব? |] _-গা-গাছে। হলো তো? এবার তপনও চটে উঠল £ গাছে চড়ে কি-কি-কিচ কিচ করতে থাকো । : --শুশতক গাছে ওঠে না।-_গম্ভীর হয়ে আমাকে জানাতে হলো! £ তাকে কোনোদিন কিচকিচ করতেও শোনা যায়নি। _না হয় তুমিই একটা এগ-এগ-এগ- কিন্ত তপনের “এগ আরা ডিমটিকে, আর ফুটতে দেওয়া যায় ন। বাধ! দিয়ে হললুম, একাঁটি মোটর যাত্রা ৭৬, এগের কথা পরে হবে। ইচ্ছে হয়, তুমি মনের আনন্দে তা দাও গে। আপাতত আমাকে ছাড়ো-আমি হিসেবটা করে ফেলি। _ধুত্তোর হিসেব !__তপন ঠৃযাচকা টানে আমাকে চেয়ার থেকে তুলে ফেলল ? চলো শীগগির । একেবারে মরিয়া হয়ে এসেছে । আর তপনের যখন একবার গে চাপে তখন যে তাকে কোনোমতেই ঠেকানো! যায় না, সে আমি আগে অনেকবার দেখেছি । কোথায় ঘেতে হবে? _-বেড়াতে। এমন লা-লাভলি সকাল! আকাশ মেঘলা, পৃবের হাওয়া দিচ্ছে, অফিস বন্ধ--এমন দিনে কেউ হিসেব লেখে ? তুমি আবার নিজেকে সা-সাহিত্যিক বলো! এই জন্যেই তো সব কাগজ থেকে তোমার লেখা ফে-ফে-ফে-- হিটিং বিলো দি বেলট! আমি তারম্বরে ৰাধা দিলুম £ সক্কালবেলাতেই ফ্যা ফ্যা কোরো ন1! তপন, আমার মন-মেজাজ ভালো! নেই । তোমার সঙ্গে আমি বেড়াতে যেতে পারব না-_ আমাব পা ব্যথা করছে। _-পায়ের দরকার নেই। মো-মোটর নিয়ে এসেছি। - মোটর ।-_শুনে হঠাৎ দারুণ উৎসাহ বোধ হলো £ একথাটা তো মন্দ নয়। পেলে কোথায়? _কৃ-কিনেছি। মাই কার। --তোমার !- আমার বিষম লাগল একটা ঃ বলো কিহে-- একেবারে মৌটর কিনে ফেললে ! এত টাকা পেলে কোথায় ? -ভে-ভেরি চীপ। পুরোনো বটে, কিন্ত জাত বিলিতী গাড়ি। কাল কথাবার্তা বলে আজই কিনে ফেললুম। আর ডেলিভারী নিয়েই ছুটে এসেছি তোমার কাছে। চলো-_-চলো!--বেশ খানিকটা বেড়িয়ে আসা যাক। এমন লা-লা-লাভলি সকাল-_ ৭ ভপন-চারত আর বলতে হলো! না--ততক্ষণাৎ আমি পাঞ্জাবিটা গায়ে চড়িয়ে ফেললুম । আমার দরজার সামনেই তপনের গাড়ি দাড়িয়ে । সেদিকে একবার তাকিয়েই আমার উৎসাহ অনেকখানি কুঁকড়ে এল। সেই পাঁ-দানিওলা লম্বা গাড়ি-_মাথার ওপরে চাদোয়ার মতো জরাজীর্ণ হুড, রামশিঙের মতো৷ একটি প্রকাণ্ড হর্ন বেরিয়ে আছে একদিকে । তংক্ষণাৎ বিছ্বাৎ চমকের মতো! আমার মনে হলো, তা হলে একটু আগেই বারোট। গুড়ের হাড়ি একসঙ্গে ফাটবার মতো যে মনোরম আওয়াজ কানে এসেছিল-_সেটি এই যন্ত্রেরই অবদান ! তপন আমার পাঁজরায় একটা থোচা দিয়ে বললে, কিহে, কেমন দেখছ ? , বললুম, রোমাঞ্চকর । --রোঁরোমাঞ্চকর মানে? -ভয়াবহ | - তার মানে? _-ভাবছি হেনরি ফোর্ডের প্রথম গাডিখানা যোগাড় করলে কোথেকে ? _ইয়াকি নয় শ-ম-স্ব_ -কুমার। . -থ্যাথ্যাঙ্ক ইউ ।--তপন কৃতজ্ঞ হয়ে বলে যেতে লাগল: দেখতে একটু পু-পুরোনো বটে, কিন্তু ক্লাস গাড়ি! তোমাদের এখনকার তকতকে ঝকঝকে গাড়ি দা-্দাড়াতে পারে এর পাশে! ম-মরা হাভীও লাখ টাকা । _কিস্ত ভাই, মরা হাতীতে তো চড়া যায় না। আর আমি একটি মোটর যারা ৭৩ এমনি একটু গুজব শুনেছিলুম যে লোকে চড়কার জম্বেই মোটরগাড়ি কিনে থাকে । এটাও চ-চড়বার জন্যেই কিনেছি, উঠেই দেখোন। একবার । তপন দারুণ চটে গেল; তা হলে আমি এলুম কী করে! এটাকে ঠে-ঠেলতে ঠেলতে এসেছি নাকি এখানে ? _-জানিনে ভাই। তৃমি সব পারো৷। তোমার অসাধ্য কাজ নেই কিছু । সেই চোগার মতে! ট্রাউজারের পকেটে হাত পুরে কিছুক্ষণ আমার দিকে অন্ুকম্পার দৃষ্টিতে চেয়ে রইল ঙপন। তারপর নাক দিয়ে একটা বিশ্রী আওয়াজ করে বললে, উঠবে তো ওঠো- নইলে আমি চ-চললুম । তোমার সঙ্গে এড়ে তত-তক্কো করে এমন স্ব-স্থন্দর সকালটা আমি মাটি করতে চাইনে। যা থাকে কপালে- একট এসপার ওসপার হয়ে যাবে আজকে । আমি গাটির হ্যাণ্ডেল ঘোরালুম । ঘটাং-ঘট করে দরজা খুলল-_ ফেন “খুলিল পশ্চিমদ্বার অশনি নিনাদে !” ড্রাইভারের পাশের আসনে ছেঁড়া কুশনে আমি গদিয়ান হয়ে বসলুম । ৃ তপন গাড়ির চাবি ঘুরিয়ে সামনে থেকে হাত ভিনেক লম্বা একটা হ্যাগ্ডেল বের করলে। _-এখন হ্যাণ্ডেল মারবে নাকি হে? হাঁ । পু-পুরোনো গাড়ি কিনা সেলফটা ঠিক করে নিতে হবে। _-ও, আচ্ছা । ঘটাং-ঘটাং-থ । ঘট-ঘটাং-ঘট। দাত মুখ খিচিয়ে তপন হাল ঘোরাতে লাগল । গাড়ির ভেতরে এক-একটা করে ভূমিকম্প হচ্ছে মনে হলো, কিন্তু স্টার্ট নেবার কোনো সম্ভাবন। আছে বলে বোধ হলো না। 58 তপন-চীরুত --কই হেস্টাট হচ্ছে না তো। _-হবে-হবে। পুরোনো গাড়ি কিনা-একটু সময় নেবে । ঘট-ঘট-ঘটাং--ঘটাং-ঘটাং-ঘট-_ তপনের ব্যায়াম দেখে আমার মন্দ লাগছিল না। মনে মনে ওকে উৎসাহ দিতে লাগলুম £ মারো জোয়ান হেঁইয়ো-_আউর থোড়া ঠেইয়ো__সাহেব মারেগ! হেইয়ো_ রাস্তায় লোক জড়ো হচ্ছিল। কয়েকটি হাফ-প্যান্ট-পরা নাবালকের মুখে বিকশিত আনন্দের হাসি। হৃ-একটা টুকরো সরস মন্তব্যও যেন কানে আসছিল । মিনিট দশেক ঘটঘটানি সহ্য রে একলাফে নেমে কেটে পড়ব ভাবছি, হঠাং__ হঠাৎ মরা হাতীর গর্জন। আর মরা বলেই প্রেতলোকের গর্জন। অতটুকু গাঁড়িটার ভেতুর থেকে যেন সাতটা ডিজেল এপ্রিন এএকসঙ্গে আর্তনাদ করে উঠল । চারদিকে ঘে ভিড় জমেছিল--একলাফে ত্রিশ হাত পেছিয়ে গেল সেটা। গোটা দশেক কুকুর প্রাণপণে ডাক ছাড়ল। বিহ্যৎবেগে তপন উঠে পড়ল গাড়িতে, হ্যাণ্ডেলটা ছু'ড়ে দিলে একপাশে, রামশিঙের মতে হর্ন থেকে গোটা কয়েক গগনভেদী শব্দ উঠল--তারপর-- তারপর এঞ্জিনে আর বডিতে ঝড়ের খঞ্জনী বাজিয়ে তপনের মরা হাতী উধ্বশ্বাসে ছুটল! ধুলো উড়িয়ে, লোক-তাড়িয়ে, কুকুরদের .গলায় অব্যক্ত বেদনার ব্যক্ত চিৎকার জাগিয়ে, দেখতে দেখতে মফস্বল শহরের লেভেল ক্রসিং পেরিয়ে সোজা ঝাপিয়ে পড়ল আসাম রোডে । এবং আমাকে স্বীকার করতে হলো-্্যা, আদত বিলিতী গা়ি বটে! চারদিকে জানান দিয়ে চলেছে দস্তরমতো । ছেঁড়া গর্দি থেকে কুশনের খোচাথুচি এক-্সাধটু লাগছিল না তা নয়, কিন্তু গান্ডিটা যখন সত্যিই চলছে--ছু-ধারের. মেঘে ঢাক। একাঁটি মোটর বাঘা 5৫ মাঠ আর পথের পাশের সার দেওয়া শিশু গাছ থেকে ঠাণ্ডা হাওয়া এসে ষখন চোখে যুখে আছড়ে পড়ছে, তখন ব্যাপারটা আমার ভালোই লাগল । -আর, পরের মোটর গাড়িতে চড়তে কার ন! ভালো লাগে! --গাঁড়িটা তো নেহাত মন্দ নয় হে। _ হাঁ । খুব তো ঠাট্টা করছিলে তখন । _ বুঝতে পারিনি ভাই, নিজগুণে ক্ষমা করো । কিন্তু কী বলে ইয়ে-_আওয়াজটা যেন একটু বেশি লাগছে কানে । ওর কোনে! গতি করা যার না? -_ সাইলেনসার পাইপে ময়লা জমেছে । ওটা ঠিক করে নিলেই আওয়াজ থাকবে না। --আর গদিটাও মানে-_ঠিক যেন একরাশ পেরেকের ওপর বসে আছি ভাই। মানে, খুব আরাম হচ্ছে না। _স্বস্বপ্রীংগুলো খারাপ হয়ে গেছে। তা ছাড়া ধুখধুধুতি পরেছ বলেই তোমার বেশি লাগছে । তোমাকে কতবার বলেছি ট্রা-উ্রা্রা-_ _ট্রাউজারের কথা! বলছ ?__আমার দীর্ঘশ্বাস পড়ল £ ফোর্থ ইয়ারে পড়বার সময় একবার ট্রাই করেছিলুম। কিন্ত রাস্তায় বেরুতেই এমনভাবে কুকুরে তাড়া করল ফে-- তপন খুশী হয়ে একগাল হাসঙ্প ; তা যা বলেছ। সকলকে আবার ট্রা-ট্রা-ট্রাউ__মানে-_মানায় না। তোমার ওই নাহছ্স-নুহুস চালকুম্কুম-কুম-_ | ওর কুম্কুম্‌ শুনতে শুনতে আমি বিরক্ত হয়ে যুখ ফেরালুম । নিজের চেহারা নিয়ে এসব সমালোচনা আমার ভালো লাগে না। গম্ভীর হয়ে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখতে লাগলুম, তপনের গাড়ির আওয়াজে মাঠের ভেতরে বিপর্যয় ব্যাপার চলছে একটা । গোরু- ছাগলের পাল উধ্ব্বাসে ছুটে পাপাচ্ছে চারদিকে ।. প্রকাণ্ড একটা এ তপন-চারত খইয়ের বস্তার গম্ধমাদন মাথায় করে ভালোমান্ুষ চেহারার একজন গুর্টিগুটি হেঁটে যাচ্ছিল, চিনি হালাল হুড়মুড় করে পড়ে গেল। তপন নিধিকার। নিিহঠর সাকার সান গেয়ে চলেছে £ “ওগে। কণধার, এখন বাতাস ছুটুক, তুফান উঠুক, ফিরবো না গে! আর, সর্বনাশ ! বাধ্য হয়ে তপনকে বাধ! দিতে হলো তখন । _-ওকথা বলতে নেই ভাই। ফিরতেই হবে আমাকে । হিসেবটা এখনো করা হয় নি। তা ছাড়া কালকে অফিসও আছে। _তু-তুমি তো ভারী বেরসিক হে! তপন চোখ পাকিয়ে আমার দিকে তাকালো £ ওই জহ্হোই তো সব কাগজ থেকে তোমার লেখা ফে-ফে__ বললুম, শাটু আপ! বাংলাদেশে সত্যিকারের এডিটার আছে নাকি যে, আমার গ্লেখার কদর . বুঝবে? যেদিন নোবেল প্রাইজ নিয়ে আমাকে সাধাসাধি করবে, সেদিন টের পাবে আমি কি রকম লিখে থাকি। কিন্ত তার আগে আমার পা ছটো যে রোস্ট হয়ে গেল হে! তোমার এগ্রিনে জল নেই নাকি ? _ থাকবে না কেন? বেরুবার সময়ই তো জল নিয়েছি । --তা হঙ্গে এমন গরম হয়ে গেছে কেন? পা রাখতে পারছি ল1যে! __পু-পুরোনো গাড়িতে অমন হয় । যদি ট্রা-উ্রাট্রাউ-_ _ ছত্তোর ট্রা-উ্রাট্রাউ !-স্আমি সীটের ওপর পা তুলে আসন- পি'ড়ি হয়ে বসলুম। তৎক্ষণাৎ তপন ঘট করে কী একটা টানল-_ একাট মোটর যা ণ৭৭ আর খটাং করে সেট এসে আমার হাটুতে লাগল । নিদারুণভাবেই লাগল । আমি আর্তনাদ করলুম £ গেছি__গেছি ! তপন বললে, তোমারই দোষ। আমি গীয়ার দিচ্ছিলুম, কোন্‌ আকেেলে হাটুটা বাড়িয়ে দিলে শুনি? চুলোয় যাক তোমার গীয়ার। গাড়ি থামাও--আমি ব্যাকসীটে যাব। _ব্যা-ব্যাকৃসীটে বসতে পারবে না। খা-খালি স্প্রীং! আহত হাটুর পরিচর্যা করতে করতে আমি থেঁকিয়ে উঠলুম : আচ্ছা রসিকতা শুরু করেছ তো 1 পা নামিয়ে বসলে ফ্রাই হয়ে যাচ্ছি-ত্লে বসলে গীয়ারের ঘা! গাড়ি থামাও-আমি নেমে যাব। -একটু পা-টা সরিরে বোসো না। ইয়া_ঠিক হয়েছে। এইবার তাকিয়ে গ্ভাখো-_কী শ্যামল বনানী-কি রকম দি দি-_ দিগ-দিগ-_মরুক গে, প্রান্তর, কেমন মে-মেঘলা আকাশ-- বলতে বলতেই গাড়ির মধ্য থেকে খটাং খটাং করে একটা বিজাতীয় শক উঠতে লাগল । চমকে বললুম, ওটা কিসের আওয়াজ হে ? . তপন গম্ভীর হয়ে গেল। _ তাই তো! ওটা যেন ডি-ডি-ডি _ডিফারেনশিয়াল !_আমি আরো চমকে উঠলুম £ ডিফারেন- শিয়াল ক্যালকুলাস 1 কী সবনাশ--মোটরের মধ্যেও ক্যালকুলাস থাকে নাকি ?- প্রবলভাবে মাথা নেড়ে প্রতিবাদ করে বললুম £ না ভাই, এ আমি কিছুতেই বিশ্বাস করব না। তোমার এঞ্জিন খটাং খটাং শবে ক্যালকুলাসের অন্ক কষছে-_এ কথা আমি কোনোমতেই ৭৮ তপন-চারত মানতে রাজী নই ! ইয়াঞ্িরও একটা লিমিট আছে! তপন বললে, শাটু আপ! মো-মো-মোটরের কিচ্ছুই জানো না তুমি । _জানি নে তো বয়েই গেল। কিন্ত এপ্রিনের ভেতরে যে ক্যালকুলাসের অঙ্ক থাকে-__ _-আত থামো। ক্যা-ক্যা-ক্যাল্কুলাস্‌ নয়, শুধুই ডি-ডি ফারেন্শিয়াল ! কিন্তু ভা-ভারী ভাবনায় পড়া গেল হে !--তপন চিন্তিত হলো £ আওয়াজটা একেবারেই ভালো নয়। চলো, ফিরি। এক্ষুনি? এমন শ্যামল প্রান্তর-_মাঠে মাঠে এত গোরু-_ গাছে গাছে এত কাক-_এসব ফেলে ? -_স্্যা এসব ফেলেই । ডি-ডি-ডি- হত্বোর, মানে ওটা ভেঙে গেলে ভারী ল্যাঠায় পড়ব শেষকালে ! গাড়ি আর চলবেই না! । আসাম রোড ছেড়ে ডানদিকের একটা হুড়িফেল। রাস্ত৷ দিয়ে চলেছিলুম আমরা-_খুব সম্ভব সামনের কোনো চা-বাগানের দিকেই লক্ষ্য ছিল তপনের । সেইখানেই ডিফারেন্শিয়াল-ঘটিত হুর্ঘটনা ! মেঘল! আকাশটি এতক্ষণে আরো মেছুর হয়ে এসেছিল। বেশ বমবম করে বৃ্টি নামল এই সময়। নুড়িফেলা রাস্তাটা একট! প্রায়-শুকনো পাহাড়ী নদীর ভেতর দিয়ে ওপারে চলে গেছে__নদীতে ইঞ্চি-চারেক জলের একটা নীল ক্ষীণ ধারা। নদীর দিকে একটুখানি নেমে গিয়ে গাড়িটা ঘোরাতে চেষ্টা করল তপন। আর ঠিক সেইসময় কোনে! ধারালো মুড়ির ঘর্ধেই কি না কে জ্ঞানে গুড়ম! অর্বাৎ টারার ফাটল! ডানদিকে একটু হেলে পড়ে থেমে দাড়ালো গাড়িটা । আমি চিংকার করে বললুম, ইউরেক] ! এইটের জন্তেই অপেক্ষা একট মোটর যারা ৭3৯ করছিলুম ! “এখন বাতাস 'ছুটুক, তুফান উঠুক, ফিরব নাকো | -কে-কে বলে ফিরব না ?--তপন চোখ পাকিয়ে তাকালে। আমার দিকে £ আলবত কিরব-_পাঁ-পাচ মিনিটের মধ্যেই ফিরব । স্টে-স্টে-স্টে-_ স্টেশন? রেলস্টেশন ? সে এখানে কোথায় ভাই ? -আঃ-স্টে-স্টেশন নয়, স্টেস্টেপেনি! মানে এ-এক্স্্ী টায়ার। সঙ্গেই আছে। ও-য়েট-_এক্ষুনি ঠিক করে নিচ্ছি। বৃষ্টিটা বেশ চেপে নেমেছে তখন। গোঁ গে করতে করতে তপন তার মধ্যেই বেরিয়ে গেল গাড়ি থেকে। _-জ্যা-জ্যাকৃটা দাও। _লজ্যাক! সে আবার কে? তাকে কোথায় পাব? সে তো জিলের সঙ্গে পাহাড়ে বেড়াতে গিয়েছিল । _ইয়াঞ্কি বন্ধ করো স্থকুমার। গাড়ির পেছনেই রয়েছে স্থ্য। --ওইটে, ওইটে। ওকেই জ্যাক বলে। দাও-দাও-_-ভিজে ভূত হয়ে যাচ্ছি । আর নেমে পড়ো। নামব 1-_কাতর হয়ে বললুম, এই বৃষ্টিতে ? -_আমি ভিজছিন1 বুঝবি? তুমি আ-আরামে বসে থাকবে, আর আমি এক! ভিজে ঢো-ঢোল হয়ে খে-খেটে মরব ? কুইকৃ-কুইক্‌ - হেল্প মী। ইাটুটা গীয়ারের ঘায়ে টনটন করছিল, তবু নেমে পড়তে হলো । তারপর সেই দূর্দান্ত বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে জ্যাক বসানো টারার খোলা এবং-_ ততক্ষণে শীতে হাড়-পাঁজরা কালিয়ে যাওয়ার জো ।. কাপতে কাপতে বলপুম, জ্যাকের পালা তো মিটল ভাই, এবার তোমার জিল-_মানে টায়ার আনো! এরপরে যে ডবল নিমোনিয়া হয়ে যাবে হে! ্ ৮০ তপন-চারত - আর ছু" মিনিট গাড়ির পেছনে একট। পুরোনো টায়ার শোভাবর্ধন করছিল, তপন টেনে বের করে আনঙ্গ সেটাকে । এইবার ধরো এটাকে । ঠিক এখানে-এখানে। আরে, আরে টি-টি-টিউবটা তো-_ '.. টিউবটা যে কী ব্যাপার সেটা বোঝবার আগেই কোথা থেকে আট-দশটি প্রাণী আমাদের গায়ে একসঙ্গে লাফিয়ে পডল। একটা আমার নাক বেয়ে উঠে, মাথার ওপর দিয়ে বেগে বেরিয়ে গেল, আর একটা ধুতির ভেতর আশ্রয় নিতে চেষ্টা করল। প্রাণপণে. লাফিয়ে উঠে পিছল পাথরে আমি ধপাস্‌ করে আছাড় খেলগুম একটা ! এবং তারপরেই তারম্বরে চিৎকার ছাড়লুম £ হেল্প._- হেল্প-_মার্ডার ! _মা-মার্ডার নয়-_-ইছুর-ইছুর!_তপন আরো জোরে চেঁচিয়ে উঠল ঃ স্টে-স্টেস্টেপনিতে বাসা করেছিল। টি-টিউব একদম ঝাঝরা! আরে আরে- আমার শার্টের ভেতর একটা ঢু-ঢুকে বসে আছে যে !__-তপন নাঁচতে শুর করল ; কই-যাচ্ছে না তো! একবার এদিক একবার ওদিক-__কা-কা-কামড়ালেই তো র্যাট- ফিভার ! আশেপাশে একটি গাছ নেই--পাথরের ওপর আমি বসে আহি কাটা সৈনিকের মতো--তপন তার চোঙা-মার্কা ট্রাউজার পরে শার্টের ভেতর থেকে ইদুর তাড়াবার জন্যে প্রাণপণে নেচে চলেছে-_ মুফলধারান্ম বৃষ্টির ভেতরেও সেই নয়নলোভন দৃশ্যটা উপভোগ করে আমার মন প্রাণ জুড়িয়ে গেল। - গেছে--গেছে--পালিয়েছে |__হুঠাং একটা জয়ধ্বনি উঠল: তপনের £ কিন্তু গাড়ির কী হবে ভাই 1? স্টেপনিটার ভেতরে ইছুরের - বাসা, অথচ ব্যাটা রামবিলাস কালকেও গাড়ি বেচবার সময়; বলেছিল, একদম নয় টা-টা-টায়ার দে দিয়! বাবুসাব. ! একাঁটি মোটর যাত্রা ৮১ _চুলোয় যাক গাড়ি।_ খোৌড়াতে খোড়াতে আমি উঠে ঈাড়ালুম £ এ বৃষ্টি তো আর সহ্য করা যায় না! চলো, কোথাও একটা শেল্টার-__ কথাটা! আর শেষ হলো না। তার আগেই অনেক দূর থেকে অদ্ভুত আওয়াজ এল একটা । যেন একপাল বুনো মোষ ছুটে আসছে আমাদের দিকে । আর তৎক্ষণাৎ চিৎকার করল তপন £ পালাও-_-পালাও সুকুমার । বান আসছে-_পাহাড়ী বান। ॥ এক মিনিট-_ছু মিনিট _.আড়াই মিনিট ? সেই বুষ্টির ভেতর, অলিম্পিক রেকর্ড ছাপিয়ে আমরা কতখানি দৌড়ে গেলুম বলতে পারব না। তারপর কিরে তাকিয়ে দেখলুম শুকনো পাহাড়ী নদীর খাতে অন্তত সাত ফুট উঠ হয়ে ছুটে এল এক ছ্রন্ত ফেনার শভ্োত-_-আর-- আর তপনের মোটরগাটিটা এক মুহূর্তে স্রোতের ধাক্কায় ষেন একশে! টুকরো হয়ে সেই শ্রোতের মধো মিলিয়ে গেল ! কিছুক্ষণ শোকাহত চোখে সেই স্রোতের দিকে চেয়ে রইলুম আমরা । তারপর তপন ধপাস করে একরাশ জলকাদার মধ্যেই বসে পড়ল। তখন অবিশ্যি কাদাজলে আমাদের আর কোনো ক্ষতিবৃদ্ধি ছিল না। মাথার ওপর আকাশ ভেঙে পড়ছে তখনো । _পাঁঁপাচশো টাকা নগদ দিয়ে কিনেছিলুম গাড়িটা । গেল! গিয়ে যে ভালোই করল, অন্তত হ্র-ছুটে মানুষকে আরোশকিছুদিন পরমায়ু দিয়ে গেল, ইচ্ছে সত্তেও সে-কথাটা আমি তপনকে এই সুহূতে কিছুতেই বলতে পারুম না। তপন ঘরে ঢুকে বললে, শু-শু-শুক-_ আমি তংক্গণাৎ আপত্তি জানালুম । বললুম, না, আমি শুশুক নই-_আমার নাম স্থকুমার। - তোমাকে শু-শুক বললেই ঠিক হয়, যেরকম মূম্‌ মোটা হচ্ছ দিন দিন! মাসে কত পা-পাউগ্ড করে বাড়ছে! হে? পঁ- পঁচিশ? গম্ভীর হয়ে বললুম, না, দশ পাউণড। কিন্ত তাতে তোমার কী? আমি মোটা হবো-_-আমার খুশি । -তা হও-_হতেই থাকো । শেষকালে যখন সেই ব্যা-ব্যা ব্যা- . আরো গম্ভীর হয়ে বললুম, বাজে কথা। মোটা হলে কেউ ব্যা-ব্যা করে ডাকে না। _না, না, ডাকের কথা নয়। সই ব্যা-ব্যা-ব্যা-আযাঙের মতো --সরু গৌঁফের তলায় এতক্ষণে সাফল্যের হাসি ফুটল তপনের £ যখন ফ-ফটাস করে ফেটে যাবে-_ -যাই যাবো । ফেটে যাবো বোমার মতো, বিদীর্ণ হবো! বিধধার মতো, বিক্ষোরিত হবো-_ভেবে-চিন্তে আর কিছু না পেয়ে একেবারে মোক্ষম কথাট! বললুম, প্রলয়ের মতো । চার- দিকের লোক জানতে পারবে, হা, একটা কাণ্ড হলো বটে। তোমার মত শু'টকে পোকা-দা হয়ে বেচে থাকার চাইতে-- . তপনের ডারু নাম পোকা-_এইটে আমি জেনে ফেলবার পর থেকেই তপন অত্যন্ত নার্ভাস ইট্নে আছে। যখনই এসে আমার মোটা নিয়ে যা-তা বলতে শুরু করে, আমি পত্রপাঠ ওই সনে ওকে বধ করে ফেলি। ' 'তৃপ্রন' বললে, থা-থাক, আর বগা করে দরকার মেই। আর্ট অজ উইন্জদযা করেতল | একাঁট করুণ ফোটোগ্রাঁফি ৮৫ আমি বলনুম, আলবং। সে-কথাটা আগে বললেই সব মামলা! মিটে যেত। তপন ধপাস করে আমার তক্তাপোশের উপর বসে পড়ল এবং বসেই হাত বাড়িয়ে আবার সিগারেটের প্যাকেটট! দখল করল। আমি ব্যাজার মুখে সেটা দেখলুম। . বললুম, তপন, ডাক্তারের! বলেছেন, সিগারেট খেলে লাং-ক্যানসার হয় । _তু-তুমি খাও যে? --নিজের পয়সায় খেলে হয় না। কিন্তু পরন্মৈপদী যদি চালাও, বিশেষ করে বন্ধুর প্যাকেট থেকে-_শিয়োর ডেথ । _ও১ তাই নাকি 1_-সরু গোৌঁফের তলায় তপন. মিটমিট করে হাসল £ এ-ও বুঝি ডা-ডাক্তারদের থিয়োরী ? _ সার্টেনলি। তা হলে সেটা প-প-্রমাণ করে আমিই শহীদ হতে চাই _বলেই একটানে আধখানা সিগারেট নামিয়ে দিলে। অগত্যা দারুণ চটে কিছুক্ষণ আমি চুপ করে রইলুম। তারপর বললুম, এই ছুটির সকালে আমাকে জ্বালাতে এলে যে! _ জ্বালাতে নয়, চালাতে । সিগারেটে টান দিয়ে তপনের বুদ্ধি খুলে গেছে বলে মনে হলো! 2! ওঠো হে সু __শুশুক নয়, সুকুমার । তপন বললে, উহ, সিন্ধঘোটক। চলে৷। কোথায় পোকাদ। ? -__অল রাইট স্ু-স্কুমার। হলো, এবার? চলো আর কথা বাড়াতে হবে না। ৰ _কিস্ত কোথায় 'যেতে হবে? আবার মোটর কিনেছ নাকি 1. ৮ পাশাগল ! 0 নেই। .. ৮৬ তপন-চক্িত _-তবে কি সেই পারুল পিসিমার বাড়ি গান শুনতে ? - রামচন্দ্র ! _তা হলে আবার কি পোলাও রান্না করেছ? নাকি সেই মিসেস ঘো-ঘোবাল আসছেন ? -_বোকো না !-তপন,. একটা হ্্যাচকা টান দিয়ে আমায় তুলে ফেলল ঃ নাউ--টু আকৃশন ! এবং কিসের আযাকশন সেটা বোঝবার আগেই হিড়হিড় করে টেনে নিয়ে এল রাস্তায় । আমাদের এই শহরের গা ঘেষে একটি 'নদী আছে। একদা আ্রোতশ্থিনী, কলম্বনা, নটিনী-তটিনী--এইসব ভালো ভালে! নামে তাকে ভূষিত করা যেত। অধুনা এটি একটি মজা খাল। ঘন নিবিড় কচুরিপানার ফাকে ফাকে কালচে জল এবং কয়েক কোটি মিলিয়ন-বিলিয়ন মশার জন্মভূমি ! বিকেল চারটে বাজতেই তারা দলবেঁধে জয়যাত্রায় বেরিয়ে পড়ে আর শহরের যাট-সত্তর হাজার _মান্নষের মাথাপিছু হাজার-পাঁচেক করে জায়গা ভাগ করে নেয় _মাথার ওপর গোল হয়ে ঘুরতে থাকে, অয্বন্বল্প বৃষ্টি হলে গায়ে লাগে না, মশার ঝাকেই আটকে যায়। | তপন আমাকে টানতে টানতে সেই নদীর ধারে নিয়ে এল। আর এই বেলা সাড়ে ন'টায় ঝকঝকে রোদের ভেতরেও কয়েকটি মশ। দারুণ উৎসাহে আমাদের দিকে অগ্রসর হলো । ঘোর সন্দেহে অভিভূত হয়ে আমি বললুম, তপন এর মানে কী? সরু গৌোঁফের নীচে তপন রহস্যময় হাসল £ তোমাকে একটা সা-সারপ্রাইজ দেব । বললুম, তুমি সবদাই আমার কাছে একটা জীবস্ত সারপ্রাইজ, ও-জন্যে বেশি চেষ্টা তোমায় করতে হবে না। এখন ব্যাপধরটা সোজাস্থজি বলে' ফেলো !-এএই সাঁত-সকালে নদী-নামধেয় এই নর্দমার কাছে আমায় টেনে আনলে. ক মতলবে 1. একাঁট করুণ ফোটোগ্রাফ ৮৭ _-একটা জিনিস আমি কিনেছি । ক্যা-ক্যা-ক্যা-_ _ক্যাক্যা আশ্চর্য হয়ে বললুম £ ক্যাট ? মানে বেড়াল? বেড়াল কেনবার দরকার কী? পয়স! দিয়ে কি তাদের কিনতে হয় ? তারা তো আপনিই-এসে জোটে, দলে দলে জোটে এবং তাড়ালেও তো যায় না। তাদের সম্বন্ধেই তো কবি গেয়েছিদেন ঃ “না চাহিলে ঘারে পাওয়া যায়, তেয়াগিলে আসে হাতে, _'তোমার মুণ্ড!__ এতক্ষণে দেখতে পেলুম তপনের কাধে একটা কালিম্পংয়ের ঝোলা রয়েছে । সেটা থেকে কী বের করতে করতে তপন বললে, এতে আছে একটা! ক্যাম্‌ক্যাম্‌__ _ক্যামেল ?--আমি আরো! আশ্চর্য হলুম ঃ উট? কাধের ঝোলার মধ্যে উট? তুমি কি পি সিসরকারনাকি হে? কিংবা কোথায় যেন পড়েছিনুম_“ছু'চের ছিদ্র দিয়া উটও গলিয়া যাইতে পারে" ঝোলাতে থাকবে সে আর বেশি কথা কী? --তোমার মাথা !--তপন এবার ঝোল! থেকে একটা ক্যামের! বের করে ফেলল। ্‌ -_-ও৪৮ ক্যামেরা! স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে আমি ধপাস করে ঘাসের ওপর বসে পড়লুম ঃ ওর জন্যে তুমি আমায় একেবারে নদীর ধারে টেনে আনলে 1 ব্যাপার কি, চোরাই মাল নাকি? _চোরাই হবে কেন 1--তপন বিকট ভ্রুকুটি করে আমার দিকে তাকালে! £ আমি কি একটা ক্যা-ক্যামেরা কিনতে পারি না ? - --আলবাত পারো । ক্যামেরা, ক্যামেল' সবই কিনতে পারো । কিন্ত আমার জ্িজ্ঞান্ত এই যে, সেটা ঘরের ভেতরে ন' দেখিয়ে নদী পর্যস্ত আনতে হলো কেন? র _-কারণ এখানেই তোমার ছবি তূলব। বেশ গ্যা-ন্যা-হ্যাচারাল সিনারির ভেতরে । -_-আমি আনন্যাচারাল নাকি ? -নিশ্চয়। অমন সি-সিম্কুঘোটকের মতো মোটা হয়ে_ ৮৮ 'তপন-চাঁরত বাধা দিয়ে গম্ভীর স্বরে বললুম, তা হলে কি পোকার মতো শুটকে হবো বলতে চাও ? তপন ব্যস্ত হয়ে বললে, যেতে দাও--যেতে দাও, লেট ইট গো। মানে, এখানে চারদিকে বেশ হ্যা-ন্যাচারাল বিউটি, এরই ভেতরে তোমার ছবি তুলব। মানে, তোমাকে দিয়েই শুরু করব আর কি! --আগে বললে না কেন? বেশ দাড়ি-টাড়ি কামিয়ে সো মেখে টিপটপ হয়ে আসতুম। __না-না, তাতে আর্টিফিশিয়াল হয়ে যেত। এই যে তোমার মুখে খোঁ-খৌচা খোচা দাড়ি রয়েছে, চুল উশকো-খুশকো-_তাতে বেশ একটা-_ইয়ে_যেন আদিম-_ | - আদিম মানে? একটা বর্বরের মতো! দেখাচ্ছে--এই তো! বলতে চাও? তীব্র প্রতিবাদ করে বললুম, একৃসকিউজ মী তপন, আমি ছবি তুলতে চাই না| -__ আহা, চটে যাচ্ছ কেন? তুমি তো সাহিত্যিক হে- প্রায়ই দেখি পোস্টঅফিস থেকে তোমার গল্প ফেরত দিয়ে যায়। তপন মিটমিট করে হাসল £ মানে এখন তোমার ছবি তুললে ঠিক মনে হবে, এইমাত্র একটা গল্প ফেরত পেয়ে তুমি দা-দা-দারুণ উদাস টির | --আই সে পোকাদ।, আমি ছবি তুলব ন1। চলে যাচ্ছিলুম, তপন খপ করে আমার হাত চেপে ধরল £ আচ্ছা, আচ্ছা, আই উইথড়। মানে, এখন ছবি তুললে মনে হবে, তুমি একটা খুব ঘো-ঘো-ঘোরালো প্লট নিয়ে চিন্তা করছ, তাই তোমার মুখে একটা ক-করুণ বিষাদের ছায়া পড়েছে। হলো এবার? গোঁজ হয়ে বললুমঃ হলে! । নাও-_এবারে কী ছবি তুলবে তোলো । একটি করুণ ফোটোগ্রাফি ৮৯ -_না-নাঃ ওভাবে সোজ দাড়িয়ে নয়। একটা বেশ লা-লা- লাভলি কম্পোজিশন চাই । মানে একদম নতুন ধরনের ।--তপন এদিক-ওদিক তাকালো £ দি আইডিয়া ! তুমি শুয়ে পড়ো। __-শুয়ে পড়ব ? _-হা, এই ঘা-ঘাসের ওপর। শুয়ে শুয়ে ঘা-ঘাস খেতে থাকো। _-শুয়ে শুয়ে ঘাস খেতে থাকব 1 আমি চটে গেলুম £ কেন ঘাস খেতে থাকব ? আমি কি গোরু ? --আঠ গো-গো-গোরুর মতো! ঘাস খেতে কে বলেছে তোমাকে? বেশ কাত হয়ে--আকাশের দিকে তাকিয়ে-_-একট! ঘা-ঘাসের শিস্‌ চি-চিবৃতে থাকো । যেন আকাশ থেকে একটা ভাব-__ আমি খপ করে কথাটা কেড়ে নিয়ে বললুম, ভাবের মতো পেড়ে নিতে চাইছি । _এগজাকূটলি ! ঠিক বুঝেছ এবার । হাঁ, শুয়ে পড়ো । না- না, ওদিকে নয়। দেখছ না--স্-সূর্ধটা একেবারে চোখের সামনে জ্বলছে? এ-ধারে_-এই পাশটায়__ _কিস্তু এদিকের ঘাসগুলে! যে বড্ড নোংরা হে ! তপন আশ্চর্য হলে £ নোংরা ? ঘাঁঘাস আবার কবে নোংরা হয়? ওরা হলো-_কী বলে- ধ-ধ-ধরণীর আনন্দের উচ্ছ্াস। নাও _কুইক-_ অগত্যা আমি ঘাসের ওপরে কাত হলুম। কিন্তু কোথেকে পচা গোবরের গন্ধ আসছিল আর এই চন্ডচড়ে রোদের ভেতয়েও "তিন-চারটে মশা এসে আমার নাক-বরাবর চড়াও হতে চেষ্টা করছিল। খপ করে আমি একটা মশা মেরে ফেললুম। আর সফলতার শাস্ত পুলকে সমস্ত মন আমার ভরে গেল। -ওকি, নড়ছ কেন? স্টে-স্টেডি হয়ে থাকো ।--তপন বেশ কায়দা করে হাটুগেড়ে বসে পড়ল £ বাঃ__বেশ হয়েছে--নাইস ! ৯০ ভপন-চাঁরত কিন্তু ঘা-ঘাসের শিস্‌ তো চিবুচ্ছ না? _-এই সকালবেলা আমি ঘাস খেতে পারব না। কিছুতেই নয়। বলো তো বরং আঙুল চুষতে পারি। _বু-বুডো বয়েসে আঙল চুষবে কি রকম ?_-তপন অত্যন্ত বিরক্ত হলে! ; তার চাইতে আকাশের দিকে ঠায় চেয়ে থাকো । ইয়া, ঠিক হয়েছে। এখন স্পীড আর আযপারচারটা করে নিতে হচ্ছে। ওয়ান ম্ম্মিনিট_- _বলেই পকেট থেকে একটা কাগজ বের করে পড়ে যেতে লাগল £ ব্রেজিং সান--মনিং সান- ক্লাউডি সান-- বিরক্ত হয়ে বললুম, কী হচ্ছে হে? ঘাসের ভেতর থেকে কী একটা পোকা আমায় কুট-কুট করে কামড়াচ্ছে, কানের কাছে পিনপিন করে মশা ডাকছে । ওদিকে আবার বিচ্ছিরি গোবরের গন্ধ। যা করবে, চটপট করে ফেলো । "ব্যস্ত হচ্ছ কেন? স্প-_স্প- পীড আর আাপারচার ঠিক না হলে কারেক্ট পিক্চার হবে কী করে? তা হলে মনিং সান _কৃ-কৃ-ক্লাউডি সান__ আমি বললুম, মুনি সান, নাইটি সান-_ __মুনি সান- নাইটি সান?1--তপন প্রথমটা চমকে গেল। দুরপর সামলে নিয়ে বললে, ঠাঠা্টা নয়। সু-ন্থস্থক্‌_- দার ৮ এখ্যাঙ্ক ইউ | না, ঠাট্টা নয়। ব্যাপার ভে-ভেরি সিরিয়াস। অল্‌ রাইট--আযপারচার সিক্সটিন, স্পীড হাণ্ডেড-_ডি-ডি-ডি-ডিস, মরুক গে, ইনফিনিটি ! পইনফিনিটি 1 আমি কাতর হয়ে বললুম ; অনন্তকাল আমায় এইভাবে শুইয়ে, রাখবে নাকি হে? এদিকে আমি যে পোকার কামড়ে.জেরবার হয়ে গেলুম ।.-.ওদিকে আবার মশা | -শাট আপ! স্-স্টেডি? ওয়ান-ট--থী--ক্রিকৃ! একাঁট করণ ফোটোগ্রাঁফি ৯১ -_-বীচানে--বলে যেই তড়াক করে লাফিয়ে উঠেছি, তপন তারম্বরে টেঁচিয়ে উঠল । - হয়নি, হয়নি_কিছু হয়নি । এগেন। -এগেন আমি দক্তরমতো ক্ষেপে গেলুম £ এতক্ষণ ঘাসের ওপর আমায় এইভাবে ফেলে রেখে এগেন ? _-কী করা যাবে ?--তপন দাত খিচিয়ে বললে £ মনেই ছিল না যে, লেনসের 'ঢাঁঢাকনাটা খোলাই হয়নি । নাও, আবার শুয়ে পড়ো। জামা! ঝাড়তে ঝাড়তে আমি বললুম, অসম্ভব । ঘাসের ০ভতরে শুয়ে অনন্তকাল পোকার কামড় খাব, এমন পোকার আমাকে পাওনি। আমি এবার চললুম, টা-__টা-_- বলেই বেগে প্রস্থান করবার চেষ্টা করলুম, কিন্ত তপন খপ করে আমাকে জাপটে ধরল । _ আহা, চটে যাচ্ছ কেন? তু-ভুল তো মানুষের হয়েই থাকে । __তুমি অতি থার্ডক্লাস ফোটোগ্রাফার । সরু গৌোঁফের নীচে আবার সেই মনোরম হাসি হেসে তপন বললে, হাত পাকাতে পাকাতেই ফা-ফার্ট ক্লাস হয়ে উঠব । "কিন্ত আমার ওপর কেন? সামনে কচুরিপানা রয়েছে, মাঠে এনতার গোরু-ছাগল চরছে--যত এ হাত পাকাও। আম্াকে আর জ্বালিয়োনা | -_ আচ্ছা-আচ্ছা, আযনাদার চান্স। _আমি শুতে পারব না। ইম্পসিবল! আর ধরাশায়ী করতে পারছ না আমাকে । _-তবে: দী-্দাড়িয়েই থাকো ! নানা ওভাবে নয় ।--কিছুক্ষণ চারদিক পর্যবেক্ষণ করে বললে, .ঠিক হয়েছে। এই ক-ক-কদম গাছটায় হেলান দিয়ে দাড়াও। --কদম গাছে হেলান দিয়ে ? কারার মতো? ৯২ তপন-চাঁরত --একদম। আমি বললুম, তা হলে একটা মুরলী দরকার। আর ইয়ে --একটুখানি কেশে নিয়ে বললুম, পাশে যদি, মানে বুঝতেই পারছ, ইয়ে যদি শ্রীরাধা না থাকে-_ তপন দাত খি'চিয়ে বললে, সির্-সির্‌ -সির--মরুক গে- রাধা ! ওই তো সিন্-সিন্সিস্কঘোটকের মতো! তোমার চেহারা, আবার রাধা! একটা কুঁ-কুঁ-কুজী-টুজী হলে বরং মানাত ! -কী! আমার ছবি নেবে আবার আমারই চেহারাকে অপমান করবে ! তুলব না। --আচ্ছাঃ পিস্‌-মানে সন্ধি। মেনে নিলুম তোমার চেহারা একেবারে ক-কন্দর্পের মতো! । তা! রাধা যখন এখানে নেই, মুরলীও আনা হয়নি, তখন তুমি একাই ফাড়াও। তোমার বূপেই সব আলো! হয়ে যাবে। আঃ যাও না! বেলা বেড়ে যাচ্ছে এরপর আর ভালো! ছবি হবে না। অগত্যা হাসি হাসি মুখ করে কদম গাছে হেলান দিয়ে আমি দাড়ালুম। মনে মনে ভাবতে চেষ্টা করলুম, আমিই সেই নওল কিশোর, শ্রীমতী এখুনি আমার পাশে এসে হাজির হবেন। আর তপন পকেট থেকে সেই কাগজের টুকরোট! বের করে হিসেব করতে লাগল ঃ ব্রেজিং সান-_ক্লাউডি সান-__ আমি বললুম, মুনি সান-_ _ উন, যুনি সান হয় না। হুঁ, শেডি জায়গা__মানে ছায়া রয়েছে। আযাপারচার তা হলে সি-সি-সি-_ বললুম, ছি-ছি-ছি-_ _-না, ছি-ছি-নয়, সি-সিকৃসিক_মানে ষোলো । স্স্স্পীড পর্ধাশ-_ডি-ডি-ডিস-_চুলোয় যাক--দশ ফিট !--ক্যামেরা ঠিক করতে করতে তপন বললে, রেভি ? ওয়ান-ট্-- কিন্ত থী বলবার আগেই আমি লাফ মারলুম একটা-_ প্রচণ্ড একাঁট করণ ফোটোন্ত্রাফ ৯৩ লাফ! আর লাফিয়েই ব্যাপারটা শেষ হলো না, তারপরে আমি নাচতে লাগলুম-_ঘুরে ঘ্বুরেই নাচতে লাগলুম ! সেটা রুম্বা না, না ফক্সট্রট, না হুলাহুলা কে জানে ! তপন বললে, এই-মরেছে ! আরে নাচ্ছ কেন? ছবি নেবকী করে? থামো-থামো ! কিন্ত থামতে চাইলেই কি থামা যায়? রাধা-কেষ্টর কারবারই আলাদ1-_ওদের অসাধ্য কাজ নেই, কিন্তু আমার পক্ষে কদম্বমূলে ঈাড়ানে! যে কী মারাম্রক ব্যাপার সে আমি মর্মে মর্মে অর্থাৎ চর্মে চর্মেই টের পাচ্ছিলুম। কদম গাছতলায় লাল পিপ'ড়ের বাসা ছিল। ৰ _উঃ গেলুম যে! বাপস-_কী পিপড়ে! প্রাণপণে পা চুল- কোতে চুলকোতে আমি দাপিয়ে চললুম £ ইস্-_এই পোকাদার পাল্লায় পড়ে__উস্-কী জোর কামড়াচ্ছে! ই;-_কী ডেঞ্জারাস্‌ ! আনন্দে আকর্ণ হাসি হাসল তপন । --বললুম ঘা-ঘাসে শুয়ে পড়ো, সেটা তো তোমার ভালো! লাগল না। এখন-_ _ শা আপ! ইউ মার্ডারার, তোমাকে আমি খুন করব ! জ্বলুনি থামল দশ মিনিট পরে। তখন আমি বিধ্বস্ত হয়ে ঘাসের ওপর বসে পড়েছি। আর একটা স্বগর্শয় হাসিতে তপনের সমস্ত মুখ ভরে উঠেছে। - এইবারে ঠিক হয়েছে। এতক্ষণ ধরে ষে পোজটা; আনতে চাইছিলুম--এগজাকৃট এসে গেছে তোমার মুখে! একটা বা-ব্যা- ব্যথাভরা বিরহ, একটা কা-কাতর ধুসরতা--একট। নিবিড় আবেগ, একটা প-প-পরাজিত হাহাকার-- ইচ্ছে করল, উঠে একটা চড় বসিয়ে দিই ওকে--কিস্ত এতক্ষণ নাচানাচি করে আমি বেদম হয়ে গিয়েছিলুম। কেবল চোখ পাকিয়ে প্যাট-প্যাট করে চেয়ে রইলুম ওর দিকে । ৯৪ তপন-চাঁরিত সরু গৌফে একটুখানি তা দিয়ে তপন বললে, ভ-ভ-ভগবান আছেন। যা চাইছিলুম-_একদম সেই জিনিস! যা একখানা ফোটো হবে- মার্ডেলাস !_ ক্যামেরা নিয়ে পিছু হটতে হটতে তপন বঙ্গে চলল £ একটা বি-বি-বিরহ, একট! বু-বু-বুকফাটা হাহাকার-_একটাঁ__ উত্তরে আমি ঘোৎ করলুম । _-আহা; চটো কেন? খুব ন্যা-ন্তা-্যাচারাল ছবি হবে। এইবার-_হ্-_-পকেট থেকে আবার কাগজের টুকরো বেরুল ঃ ব-ব-রেজিং সান-উন্থ, ঠিক তা নয়_ আচ্ছা, আপারচার এগারো স্‌-স্-পীড-_ওয়ান হাণ্ডেড-_ তপন এক-পা এক-পা করে পিছু হটতে লাগল, আর আমিও পি'পড়ের কামড় ভূলে গিয়ে একটু একটু করে কৌতুহলী হয়ে উঠতে লাগলুম । আমার অবচেতন মন খুশী হয়ে বলতে লাগল : এতক্ষণে একট! ইন্টারেস্টিং ব্যাপার নির্ঘাত ঘটতে যাচ্ছে। তপন বললে, হাসে! তো৷ একটু ? -হাসব? _স্ট্যা। কদম গাছে হেলান দিয়ে যেরকম হাসছিলে-_-তপন মিট মিট করে হাসল ওই রকম একটুখানি হাসলেই হবে। একট! রি-রি-রিক্ততার তিক্ত হাসি, একটা-_ক্যামের! ঠিক করতে করতে তপন কিছু হটে চলল £ একটা ধুসর হা-হাঁহা এবং তৎক্ষণাৎ আযাক্-কৃ--ঝপাস্চ করে একটা শব্দ হলো, আর আখমি পরমানন্দে বললুম £ হাঃ _হাঃ-_হাক তপন ঠিকই বলেছিল, ভ-ভগবান আছেন। ভা--তিনি ছিলেন, খুব কীছাকাছি ছিলেন। তপন ক্যামেরা ঠিক করতে করতে পিছু হটছিল, একটু একটু করে সরে যাচ্ছিল . মজা নদীর কিনারার দিকে, এতক্ষণে আমার মুখে রিস্ততার একটা ধুসর হাহাকার ছেখতে পেয়ে কোনে দিকে তার লক্ষ্য ছিল না-_ একটি করুণ ফোটোগ্রাফ ৯৫ আর আমি দেখছিলুম এবং ভ-ভ-ভগবান দেখছিলেন ! মজা নদীর ছূর্গন্ধ কাঁলোজল তোলপাড় করে তপন ওঠবার চেষ্টা করছে। গায়ে মাথায় কচুরিপানা, নদমা-ত্র্যাণ্ড ট্রাউজার কাদা মেখে একাকার, উঠতে গিয়ে বার বার পা পিছলে যাচ্ছে _-রিয়্যাল হাহাকার যাকে বলে! হাজার হোক, বন্ধু তো! হাত বাড়িয়ে এক হ্্যাচকা টানে আমি ওকে ডাঙায় তুলে যেললুম। তপন হাউ হাউ করতে করতে বললে, আমার ক্যা-ক্যা- কা আমি বললুম, ক্যামেল ? _ না, মেরা । মের] ক্যামেরা হাউ হাউ করতে করতে তপন বলে চলল: জলে পড়ে গেছে-_ব্রা-ত্র্যাত্র্যাড নিউ-_তুলতে পারলুম না ধীরে স্থান্থে তোল! যাঁবে- ভাবনা কী। আমি সান্তনা দিয়ে বললুম, ততক্ষণ আগ্ডারএয়াটার ফোটো গ্রাফি চলতে থাকুক, তুমিও বাঁচো, আমিও বাঁচি ! তিন সপ্তাহ ছুটির পরে, ব্যাঙ্কে ফিরে এসে আমার ঘোরতর সন্দেহ হলো যে, তপনের একটা কিছু পরিবর্তন ঘটেছে। না--চেহারায় কিছুই বদলায় নি। সেই চোঙামার্কা প্যান্ট, সেই সরু গোঁফ, সেই খাড়া খাড়া চুল। হাদয়ঘটিতও কিছু নয়, মানে প্রেমে পড়েছে কিংবা বিয়ের কথা চলেছে এ-রকমও মনে হলো না। তা হলে তো বেশ ভাবুকের মতো দেখাত, উদাসভাবে চেয়ে-টেয়েও থাকত, ক্যাব লা-ক্যাবলা হয়ে যেত। আমি স্পষ্ট দেখলুম, চোখে ধূর্ততা, মুখে সেই মিটমিটে গা-জ্বালানো হাসি । প্রেমে পড়লে কিংব। বিয়ের ব্যাপার হলে ওরকম ধড়ীবাজের মতে! দেখায় না কাউকে । বরং আমাকে এসে সম্ভাষণ করে বললে, “মি যে-রকম মোটা হচ্ছ সু-স্-সথক_ বলগলুষ, “আমি মোটেই শুশুক নই--আমার নাম সুকুমার ।* লা ্-ু-ম্ুকুমার নয় বরং স্-কু-কুনড়ো রলা যায়। নইলে একটা হিপ-হিপ-_ আমি বঙলুম, “হিপ-হিপ- হুর্র্যা ! সরু গোঁফের নীচে তপনের মিচকে হাসি আরো ধূর্ত হয়ে উঠল ঃ না_ না, হর্র্যা নয়। হিপ-হিপ-পটে-- “পট্যাটো ?, ূ “তার চেয়েও খারাপ ।. হিপ-হিপো-পটেমান ! “বটে, আমি জলহন্তী ?-_চটে গিয়ে বললুম, “তিন সপ্তাহ পরে ফিরেছি, কোথায় কুশল-টুশল নেবে, তাঁর বদলে জলহস্তী বলা হল আমাকে? আর তুমি কী? তোমার নাম পোকাদা নয় ?” পোকাদা__এই' নামটা শুনলেই নার্ডাস হয়ে যায় তপন। হাড়-জালানো হাসিটা বন্ধ হলো তক্ষুনি। 'ডোন্ট সে পোকাদ1+- ওটা আমার নাম নয়, ব-বদনাম। ছে-ছেছেলেবেলায় একট! পোকা ধরে খেয়েছিল) তারপর থেকে... তপনের চৌরচ্ ১৯ নিশ্চয় বেশ বড়ো সাইজের, কালো-_ভে1-ভে1 শব্দে উলটে- পড়া একটা গুবরে পোকা ধরে খেয়েছিলে। তোমার মতো! বাজে লোক এর চাইতে বেটার পোকা খেতেই পারে না।, রেগে তপন আরো! তোতল! হয়ে গেল। “আর তু-হু-ুমি ? নিশ্চয়--কৃ-কৃকোলা ব্যাঙ খেয়েছিলে একটা । তাই হি-হি-হি-হিপ-_-মরুকগে-_-এইরকম মো-মো-মো- মোটা হয়ে যাচ্ছ। শেষে একদিন ফ-ক-কটাশ করে ফেটে যাবে ।, ' বলে-গৌ গোঁ করতে করতে নিজের কাউন্টারে চলে গেল। এ-জাতীয় সদালাপ আমাদের সর্বদাই হয়ে থাকে, এমন কিছু নতুন কথা নয়। কিন্তু সন্ধের পরেও যখন তপন 'আমার বাসায় এল না, তখন আমার সন্দেহ আরো ঘনীভূত হতে থাকল । এ-রকম তো হওয়ার কথা নয়। আমি বাসায় থাকব-_-অথচ তপন আসবে না__এসে আমার পুরো এক প্যাকেট সিগারেট ধ্বংস করে যাবে না, ছু" ঘণ্টা বক বক করে আমার মাথা ধরিয়ে দেবে লা, এমন অঘটন ঘটতেই পারে না। সাড়ে আটটা বাজল-_তবু তার পাস্তা নেই। সিনেমা দেখতে গেল 1 তা-ও অসম্ভব, কারণ আমি এখানে থাকলে নিজের পয়সায় সিনেমা দেখবে এমন পাত্রই সে নয়। আর কাউকে ম্যানেজ করেছে? তা-ও হতে পারে না--আমার এমন মোটা ঘাড় থাকতে আর কারো স্কন্ধারূঢ হবে সে, আর কেউ ঘাড় পেতে দেবে তার জগ্কে- দ্বিতীয় ' কোনো এহেন নির্বোধ ব্যক্তি এই ধুরদ্ধর শহরে আছে বলে ভ্রানা নেই আমার । তা! ছাড়া-_-ইংরিজি, বাংলা যে- কোনে! সিনেমাই হোক ছবি আরম্ভ হতে না হতেই--তপন কানের কাছে সমানে ফিসফিস করে, সম্পূর্ণ অধাচিতভাবেই গরটার ব্যাখ্যা করতে থাকে । ন্মামি--অদুরের হিমালয়ের মতোই অনস্ত ধৈর্ধে তা সম্থ করে যাই, আর কেউ হলে থাগ্স$ নেরে পাশ খেকে উঠিতে ১০০ তপন-চারত দেবে তপনকে। | না--এসব নয়, ব্যাপার আরে! সিরীয়াস। শেকৃসপীয়রের ভাষায় ডেনমার্ক রাজ্যে একটা গোলমাল আছে কোথাও ! বসে বসে তপনের প্রতীক্ষায় “হবসন-জবসন' করবার কোনো মানে হয় না-_-একবার নিজেকেই যেতে হচ্ছে তা হলে। মহম্মদ যদি পর্বতের (তপনের মতে আমি ক্রমে গিরি-গোবর্ধন হয়ে উঠছি-__ যদিচ আমার লেটেস্ট ওজন ছু'মণের বেশি নয় ) কাছে না আসেন, তা হলে পর্বতকেই মহম্মদের কাছে যেতে হয়। অগত্যা কাতরভাবে বেরিয়ে পড়তে হলো আমাকেই । , স্থ-বাড়িতেই আছে। নইলে, আধখোল! একটা জানালার খড়খড়ি দিয়ে আলো দেখা যেত না। কারণ, পৈতৃক বাড়ি আপাতত তপনের একলারই অধিকারে-_-তার মা-রাবা বছরখানেক ধরে শিপিগুড়িতে রয়েছেন বড়ো ছেলের কাছে। আর তপনের মেল্গদা পাকাপাকি দিল্লীর বাসিন্দা । | কিন্তু বৈশাখের এমন মনোহর সন্ধ্যায়__যখন চারদিকে এ-রকম উতরোল হাওয়! এবং সামনের আমবাগানের অসংখ্য চিড়বিড়ে পোকা সেই হাওয়ায় উড়ন্ত-_তখন সে হাওয়া এবং পোকাকে ঘরে ঢুকতে না দিয়ে এভাবে পোকাদার জানল! বন্ধ করে রাখবার মানে কী? সন্দেহজনক- ঘোর সন্দেহজনক । এই তিন্‌ সপ্তাহের মধ্যে তপন ক্রিমিন্তাল হয়ে গেল নাকি ? রোজগার ৰাড়াবার জন্তে বোমা তৈরীর কটেজ ইনডাস্টীতে মন দেয় নি..তে! 1. কিংবা নোট জালই করছে হয় তো? যে. লোকের অমন বদ্ং চোতা প্যান্ট এবং যে অমন বাজে রকমের, তোতলা-_-তার অয্নাপ্া কিছুই নেই ধঙ্গেই আমার ধারপা। নইলে .বনমুরন্ী মারতে গিয়ে পোষ! মুরগী মেরে দেয়, মাছধোয়া জল দিয়ে পায়েস, রেধে খাওয়াতে "চায় এবং ধ্য়েল.মাস্ক্‌' পরে, একটা ভক্বঙ্কর মোটরগাড়ী কিনে: নিজের, এবং. বন্ধুর প্রাণনাশের ছেষ্টা করে, 'মিসেস, ঘোক্ালকে/অভ্যর্না, ররকে তপনের চৌরচর্চা ১০১ * গিয়ে ঘোলের হাড়ির মতো! উলটে দেয় তাকে ? দরজার সামনে দ্রাড়িয়ে একবার ভাবলুম _পুলিসে খবর দেব নাকি? বোমা কিংবা জাল নোটম্দ্ধ, ধরেই নিয়েই যাক ওকে। কিন্তু আমার মোটা শরীরের ভেতরে একটা রোগা-পট্‌ক! বিবেক হঠাৎ ট্যা-ভ্যা করে উঠল। আহা) হাজার হোক- বন্ধু তো। এক সঙ্গে কলেজেও তো! পড়েছিলো । অন্তত একটা চান্স্‌ দাও ওকে। অতএব, একট1 চান্্ই দেয়া যাক। দরজার সামনে গাড়ে আমি ডাকলুম £ “তপন !? সেকেণ্ড তিনেক চুপ। কানের কাছে চেত্রের হাওয়া, কিছু পোকা এবং ক'টা মশ! ছাড়া আর কোনে! শব্দ নেই। তারপর আচমকা-_আমাকে ঘাবড়ে দিয়ে ভেতর থেকে একেবারে সেন্টি মার্কা চ্যালেঞ্ £ হু কাম্স দেয়ার ? হকচকিয়ে দাড়িয়ে রইলুম কিছুক্ষণ। নিঃসন্দেহেই তপন। কিন্তু হঠাৎ এরকম সম্ভাষণের মানে কী? সামলে নিয়ে বললুম, “ফেণ্ড।? ভেতর থেকে আবার চড়া গলায় জিজ্ঞাসা £ “হোয়টু ফ্রেণ্ড ? এ তো আচ্ছা! ফ্যাচাঙে ফেলল। হোয়ট ফ্রেণ্ডের মানে কী! এতক্ষণে সন্দেহের ওপর কিঞ্চিৎ আলো পড়ল আমার। নিশ্চয় গাজ]! খাচ্ছে দরজ।-জানাল! বন্ধ করে। গঁজায় দম না দিলে হতেই পারে না এরকম। গাড়ি সারা নান সদা রা নীড।? “হোয়ট ? গাজাখোরের নিক্কুচি করেছে ! গর্ন করে বললুম, 'বুজুম ফেও্ড ! হলো! এবার ? দরজা খোলো বলছি। আমাকে সমানে মশায় কামড়াচ্ছে-_আর ইয়াক্কি হচ্ছে ঘরে বসে ? এতক্ষণে ভেতর থেরে খিকখিক করে মিচকে. মার্কা হাসিটা ১০২ তপন-চারত শুনতে পাওয়া গেল। “বুঝেছি । সু-ন্-শুক্‌_7 শুশুক নই, সুকুমার |” “হিপ হিপ-_" ন্থরর্যা ।'--এবার আমি আরো জোরে, গর্জন করে বললুম, ুক হিয়ার পোকাদা, যদি এক মিনিটের মধ্যে দরজা! না খোলো, আমি পুলিসে খবর দেব ।” খুট করে ভেতর থেকে ছিটকিনি খোলার আওয়াজ এল একটা! । তারপর তপন বললে “সরি” গল! চিনতে পারিনি । দরজা ভেজানোই আছে-_ঠে-ঠেলে ঢুকে পড়ো । গলা চিনতে পারোনি- চালিয়াতির জায়গা পায়নি আর ! অতি বিখ্যাত আমার গলার আওয়াজ-এক এবং অদ্বিতীয়__- সেই গলায় একবার সঙ্গীত প্রচেষ্টা শুনে আমার এক রসিক আত্মীয় পালটা হু'লাইন গান শুনিয়েছিলেন আমায় £ “তোমার কণস্বরেঃ কোকিলের পুচ্ছ ঝরে! মেই গলা চিনতে পারল না! ধড়ীবাজ আর কাকে বলে! , একটা ঘোর জিঘাংসা নিয়ে আমি দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকতে গেলুম, এবং ততক্ষণাৎ__ এবং তংক্ষণাং--কোনেো! রোমহর্ধক গোয়েন্দা গল্পের মতো আমাকে অভিষিক্ত করে দিয়ে কোন্‌ শূন্য থেকে ছড়ছড় করে একরাশ জল! আমি লাফিয়ে উঠলুম, তারপরেই পায়ের তলায় মেজেতে একটা দারুণ গতিশীলতা৷ অনুভব করা গেল এবং ছু মন শরীরে ভূমিকম্প জাগিয়ে সবেগে ধরাশায়ী হতে হলো আমাকে । আর কানে এল তপনের খিক-খিক হাসি £ এক্স্নএক্স্‌ পে-পে- মরুকগে, সা-সাক্সেস্ফুল ? | সব ব্যাপারটা সামলে -নিয়ে ধাতস্থ হতে প্রায় মিনিট দশেক সময় গেল আমার । তপন আমার ভিজে জামাটা খুলে নিয়েছে, ভপনের চৌরচ্চা ১০৩ আমার এই জগদ্দল বপুকে--কী মন্ত্রে জানি না--তুলে একটা চেয়ারেও বসিয়ে দিয়েছে । মাথার ওপর বন বন করে পাখা ঘুরছিল, তাতেই আমার কানের ভে? ভে? শান্ত হলো একটুখানি । এবং চোখ খুলেই দেখলুম সামনে তপনের শ্রীমুখ। এবার আর মিচকে হাসি নয়-_-পরম পুলকে বত্রিশটা দাতই বেরিয়ে রয়েছে তার। আর সেই বিকশিত হানি দিয়েই আমাকে অভ্র্থনা করল সে। 'এক্‌স্‌_.একস্পে- পেরিমেন্ট সা-সা-সাকসেস্ফুল । কিসের একস্পেরিমেন্ট ?- সেই তুর আছাড় খেয়ে কোমর টনটন করছিল, তাই তখনো! আমি নিদারুণ ক্রুদ্ধ হতে পারলুম না £ “আমাকে মারার করবার ? “না। চো চো- “চোপরাও !' “চো-চোর ধরবার।' “আমি চোর ?- কোমরের বাথাটা অত জাদরেল ন হলে আমি. লাফিয়ে উঠে তপনের টু'টি চেপে ধরতুম। “টে-টেক ইট ইজি সুকুমার--' এক্স্পেরিমেন্টের আনন্দে এবার আর শুশুক বলল না-__বরং বেশ আদর করেই আমার কাধে হাত রাখল; “কফি খাবে এক পেয়ালা ? তা হলে তৈ-তৈ- তৈ--,, গ্যাং ইয়োর কফি ।--আমি জিঘাংস্থ চোখে ওর দিকে তাকালুম £ কিসের আনন্দে তুমি “তা-তা থে-থে করছ হে? কে চোর? কোথায় চোর? নরহত্যা করবার এই রকম বিটকেল প্র্যানের মানে কী “তা হলে সব খুখুলে বলছি আমার মুখোমুখি একটা চেয়াৰে বসে পড়ে তপন বললে, “চারদিকে তা-তাকিয়ে গ্ভাখো একবার ।, ১০৪ তপন-চারত দেখলুন এবং সমস্ত রাগ ভুলে গিয়ে প্রথমে বিহ্বল, তারপরে বিমুঢ়, আরও পরে স্তম্ভিত হলুম আনি । যে দরজায় প1 দিয়েই আমার অপঘাত তার মাথার ওপরে দড়ি বাধা একটা বিরাট ঘটি উবুড় হয়ে আছে, সেইটেই আমার সবাজ শীতল জলে অভিবিক্ত করিয়ে দিয়েছিল ; দরজার সামনে একরাশ-_ না কল! নয়, কলার খোসা ( কলাগুালো অবধারিতভাবেই তপন খেয়েছে )_--তাতে পা দিয়েই আমি ধরাশায়ী হয়েছিলুম । ছিটকিনির সঙ্গে আবার এক জোড়া চামচে ঝুলছে। ঘরের তিনটে বন্ধ জানলার নীচে কতকগুলো মেটে হাঁড়ি উপুড় করা-_তাদের পাশে আবার সেই কলার খোপা । এই জানলাগুলোতেও দড়িবীধা কতগুলো! কাটা চামচে ঝোলানো হয়েছে । আর একটা জানলার মাথায় জালিকাটা একটা থলের মতো! কী যেন লেপটেও রয়েছে। তপনের বিছানার ওপরে আবার একটা এয়ার-গানও দেখতে পেলুম আমি। কিছুক্ষণ মুগ্ধ চোখে এইসব দেখে আমি বললুম £ 'লুম্থিনি। “লু-লু-_লুম" মরুক গে_মানে কী ওর? “সরল বাংলা ভাষায় পাগল! গারদ। কিন্তু তোমাকে বেঁধে রাখবার কেউ নেই এখানে ? ূ ঠা-ঠাট্টা নয় সুকুমার লে-লে-লেট মী একসপ্নে- প্লে? অতঃপর তপনের সেই ভাষা । সেই তোতলামির কণ্টকারণ্য আর বিস্তার করতে চাই না মোটামুটি ব্যাপারটা! এই £ শহরে দিন পনেরো ধরে ছিচকে চোরের অত্যন্ত উপদ্রব বেডেছে। এর বাক্স, তার জামা-কাপড়, অমুকের বাসন, নিদেন পক্ষে তমুকের গাড়যা পাচ্ছে তাই লোপাট। এদিকে তপন একেবারে বাড়িতে একা । তার ওপর কী বলে ইয়ে-_তার ঘুমটাও একটু নিবিড়। তাই অনেক ভেবে-চিস্তে এইসব প্রোটেকশান নিতে হয়েছেন) সন্ধ্যের পরে দরজা-জানালা এইভাবে সে রেডি তপনের চৌরচ্চণ ১০৫ করে রাখে । তাই আর বেরুনো হয় না বাড়ি থেকে । _-অর্থাৎ_চোর যদি ছিটকিনি কেটে ঢুকতে চায়__ চামচে- গুলোতে সংঘাত লেগে প্রথমে টিনটিন করে ওয়ানিং বাজবে ; তারপর দরজ! যদি খুলেই ফেলে--ওপরে ঝুলছে এক ঘটি জল _-তপনের আবিষ্কত অটোম্যাটিক সিসটেমে সেটা উল্টে গিয়ে জল ঢালবে চোরের মাথায়; চোর হকচকিয়ে গেলেই কলার খোসা--শিয়োর সাকৃসেস--আমিই তার গ্রাম।ণ | এই পধস্ত বলেই তপন--আমার ব্রশ্গরন্ত্রে জালা ধরিয়ে সেই মিচকে মার্কা হাসি হেসে বললে, “আমি ঠিক বুঝেছিলুম--তোমার ওখানে যদি সদ্ধ্যেবেলা না যাই, তুমিই ঠিক চলে আসবে। এবং তারপর-_- তারপরই বটে ! আমি ঘোর রবে বললুম, “ইভিয়ট 1" “ইভিয়ট ? সাঁ-_সা-_সায়েন্টিফিক ব্রেন ।? “সায়েন্টিফিক ব্রেন! তা হলে একবার আই-এসসি ফেল করেছিলে কেন % “ফরগেট চ্যাট ! এখন এই জা-জা-জানলা গুলো; কোমরের ব্যথা ভুলে আমি দীড়িয়ে পড়লুম £ চুলোয় যাক তোমার জানলা । আমি বাসার চললুম । আই টেল ইউ পোকাদা, তুমি সবচেয়ে বাজে পোকা খেয়েছিলে, একটা ম্যগনাম গুবরে পোক।। জীবনে আমি যদি আর কখনো তোমার মুখদর্শন করি তো; “আহা--চ-চটে যাচ্ছ কেন ?-_তপন আবার আমাকে চেপে বসিয়ে দিলে চেয়ারে £ এবার জা-জানালাগুলো ৷ শ্লেট মী-_ এএএক্স্‌ রী আবার সেই তোতলামির কাটাবন। তা থেকে জানা গেল £ জানলাতেও একই সিস্টেম--ছিটকিনি ১০৬ তপন-চারিত খুললেই কাটা-চামচের ওয়ানিং। তবু চোর ঢুকে পড়লে হুড়মুড় করে মেটে হাঁড়ি ভাঙবার আওয়াঁজ-কী বলে, তপনের ঘুম__মানে যা একটু প্রগাট__সেটা তো ভাতে ভার্ভবেই, পাড়ার লোকেরও লাফিয়ে ওঠার সন্তাবনা। আর কলার খোসা তো আছেই। শিয়োর সাকসেস। আমি ঘোৎ ঘেোৎ করে বললুম, কাকে । তোমার বথাস্থান ! “নো কাকে । তপন ব্যাজার হয়ে বললে, আমি কাকে দেখেছি । এ ভে-ভেরী ব্যাড প্লেস। সেখানে যাবার কোনো দ-দ-দরকার নেই আমার । নাউ-_হা-হ্তাভ ইয়ু সীন দিস এয়ারগান ?' অস্ত্রশস্ত্রের ব্যাপারে এবার আমাকে একটু কৌতুহলী বোধ করতে হলো । এয়ার গানের কর্ক দিয়ে চোর মারবে নাকি ? “নো-নো-আমি কি গাধা? গাধা তোমার চেয়ে অনেক রেসপেকটেবল 1. গাধাকে অপমান করবার কোনো! রাইট নেই তোমার । তুমি একটি ম্যাগনাম গুবরে পোকা !” র “া-শা-শাট আপ । আচ্ছা-_-ওই দিকে-_-ওই জা-জা-জানলার মাথায় গোল খোপ-খোপ ওটা দেখতে পাচ্ছ কি ? “ছু'-দেখছি। কী ওটা? থলে নাকি? গাঁজার কল্‌্কে- টল্‌কে ওভেই রাখো বোধ হয় £ “নট থ-থলে স্যার নো গীজা-বিজ নেস-_ওটা যাকে বলেশ_ নে-নেচারস গিফট । প-প-প্র- “আর কটু করতে হবে না” আমি বিদ্রপ করে বঙলুম £ প্রকৃতির অবদান ।” ৰ র কারেকট। প-পর-পর--মরুক গে অবদান। কী ওটা জানো ? বো-বোলতার চাক 1. আয? তপনের চৌরচর্চা ১০৭ হ্যা। আমি তো অফিস করি-_ আড্ডা ফাঁফা-দিয়ে বেড়াই, খে-খে-খেয়ালই করিনি । বাড়ি ফিরেই কু-কুকার খুলে আহার এবং ঘু-ঘুম। (আমি ব্র্যাকেটে বললুম, "তুমি একটি ঘুঘু ।” ) ওই জা-জানালাটা কোণের দিকে বলে খো-খোলাই হয় না। একদিন বো-বো-বোলভার ডাক শুনে দেখি__ ওখানে ইয়া বড়া এক চাক বানিয়েছে । ভে-ভেঙে ফেলব ভাবছি, এমন সন্য় “চো-চোরের' হাঙ্গাম। তখন ভাবলুম_ শাশা-- “গালাগাল দিচ্ছ নাকি হে? 'না__না-শাপে বর। ত-তবু যদি চো-চোর ঢুকেই যায়-_- দ-দম করে এয়ার গানের এক গু-গুলি চালাব চাকে। ব্যস-- বৌ-বে করে বেরিয়ে চো-চোরকে একেবারে-” “আর তোমাকে ছেড়ে দেবে বোধ হয়? খাতির আছে বুঝি ? তপনের সরু গোঁফের নীচে আবার একটুখানি উদ্ভাসিত হাসি ফুটে বেরুল : আমি কি অতই বো-কা নাকি? রা-রাত্তিরে পায়ের কাছে একটা মোটা কম্কম্‌-_” “কমবখ ত!? “মানে কী? “মানে হতচ্ছাড়া । হয় লুম্বিনি, নয় কাকে ।' “নো-নট লুম-লুম-নট কাকে । ভে-ভেরী ব্যাড প্লেসেস। আমি একটা মোটা কম-কম-কম্বল মুড়ি দিয়ে-_ “চুলোয় যাও । তপনের সব কপট দাত আবার বিকশিত হলো £ চ-চটে যাচ্ছ কেন? এ-এএক্স্-মরুক্ক গে_মানে সা-সা-সাকৃসেস্ফুল। তুমিই প্র-প্র- প্র-পরা-অপ-- “নো স্তাংস্তাং-স্যাংক্রীট গ্র'-গ্রামার। তুমিই প্র-প্রমাণ ১০৮ ' তপনন্চরিত করে দিয়েছ। আমি ভে-ভেরী হাগী। কী করব, ব্রহ্মাতিজ নেই, নইলে রাস্কেলকে আমি ভক্ম্ীভূত করে ফেলতুম। কিছুক্ষণ অগ্রিদৃষ্টিতে চেয়ে থেকে বললুম, দামি আছাড় টি বলে তৃমি খুব হ্যাপী-_না ? [.অ-অফকোর্স_ চোখ ছুটো। ধূর্ততায় মিটমিট করতে লাগল তপনের £ “একেবারে ধ-ধড়াম্‌ করে কো-কোলা ব্যাঙের মতো র্যাদার-_হাহাতির বাচ্চার মতো! প-পড়ে গেলে! লা-লাভলি ! ক্যামেরাটা থাকলে ছ-ছবি তুলে নিতুম। কোথায় লাগে ল-ল- লরেল-হান্ডি 1 খুশিতে তপন যেন গুলগুল করতে লাগল £ "আই সে-__হিপ-হিপ-পটেটো-_ট-টমাস-_-একটা জা-জানলাও একটু টট্ট্রাই করবে ?' খুব' হয়েছে--আর নয়! উটের পিঠে শেষ খড় যাকে বলে ! কোমরের বাথ! নিদারুণ জিঘাংসায় বিলীন হয়ে গেল আমার। লাফিয়ে উঠে--এয়ার-গানটা ওর হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়ে বললুম “তোমার মতে! ট্রেটর বন্ধুকে আমি খুন করব--এই এয়ারগান দিয়েই গুলি করব !? “আহা-হ1 _পী-পী--প্লীজ--শু-শু-শুক-_” তপন এয়ার-গানটা কেড়ে নিতে চাইল । এবং--এবং ড্রাম ! টানাটানিতে অব্যর্থ লক্ষ্াভেদ। কর্ক গিয়ে লাগল সোজা বোলতার'চাকে । তীরবেগে বেরিয়ে এল হলুদ বর্ণের ডোরা-কাটা৷ একদল প্রামী_-ঘরের জোরালে! ইলেকট্রিক আলোয় তারা দিবা- লোকের মতোই দেখতে পাচ্ছে আমাদের । শক্র পরিষ্কার তাদের সামনে । “আমার কম্কম্_ কিন্তু কোথায় কম্বল? হাতের কাছে সে কম্বখত তখন রেডি ছিল না। দরকারের সময় কবেই বা! থাকে ? আমার আগে তপনই দরজার দিকে দৌড় মারল। এবং তারই তপনের চোব়্চর্চা ১০১ কলার খোসা । তারা এবারেও চোরকে চিৎ করল, অর্খাৎ তপন নিজে পড়ল, আমাকেও আর একবার তার সংঘাতে ভূপাতিত করল। সেই শিয়োর সাকসেস--নির্ধাত ! কিন্তু ঘর ভরে তখন জেট-প্লেনের মতো আওয়াজ । যৌথ- পতনের সঙ্গে সঙ্গেই আমাদের যৌথ উত্থান-_-একেবারে বিদ্বাছেগে। তারপর আমবাগানের মধা দিয়ে টেনে দৌড়। চ-চলো-স্থ-স্ু-সুকুমার, তোমার বা-বাসাতেই রাতটা কা- কা হাপানির মধ্যে কা-কা ধ্বনি হারিয়ে গেল তার। কিন্তু দরজা যে খোলা রইল-__যদি চোর ঢুকে-_এই ফাকে-+ “যাঁযা-যাকগে। চু-টুলোয় যাক চো- চো" বলতে বলতো চৌ-টো শব্দে-লন্বা লম্বা ঠযাতে- আমাকে ছাড়িয়ে ক্লীন পথ্ণশ গন্জ বেরিয়ে গেল!